দক্ষিণ কলকাতার লর্ডস মোড়ে ভয়াবহ আগুন
দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে লর্ডস মোড় সংলগ্ন একটি ব্যস্ত বাজারে বুধবার দুপুরে আকস্মিকভাবে আগুন ধরে যায়। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বাজারের পাশেই অনেকগুলি ঝুপড়ি ও ছোট দোকান থাকায় আগুন দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, এবং কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দমকলের ১৬টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। প্রায় দীর্ঘ সময় ধরে দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এখনো কিছু জায়গায় ছোট ছোট আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে, যা নেভানোর চেষ্টা চলছে।
আগুন লাগার পর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাথমিকভাবে নিজেদের চেষ্টা করে আগুন নেভাতে উদ্যোগী হন। কিন্তু আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, একপর্যায়ে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। খবর পেয়ে প্রথমেই ঘটনাস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন পৌঁছে যায়, কিন্তু আগুনের তীব্রতা ও দ্রুত বিস্তারের কারণে পরে আরও ৬টি ইঞ্জিন যোগ করে অভিযান চালাতে হয়। যাদবপুর থানা থেকেও পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তারা এলাকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
বাজারের ঝুপড়ি ও দোকানগুলোতে অনেক দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। দমকল কর্মীদের ধারণা, এই ধরনের বস্তু থাকায় আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়, যা সম্ভবত বাজারের দোকানগুলিতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে ঘটেছে। বিস্ফোরণের পর থেকেই আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং সারি সারি ঝুপড়ি ও দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। এই ঘটনায় বাজারের প্রচুর ঝুপড়ি দোকান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, ফলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু ঝুপড়ি দোকানই নয়, বাজার এলাকায় ফুটপাথের ধারে থাকা বেশ কিছু স্থায়ী দোকানও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিতে এবং দমকলের কাজ তদারকি করতে ঘটনাস্থলে হাজির হন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তিনি জানিয়েছেন, দমকল বিভাগের আধিকারিকেরা আগুনের প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখছেন, এবং তদন্তের পরেই এর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, আগুন লাগার পর দমকলের ইঞ্জিন আসতে দেরি করেছে, যার কারণে আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও দেবাশিস কুমার এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, “যদি দমকল দেরিতে আসত, তবে এত দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হত না।” তিনি আরও আশ্বস্ত করেন যে, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
এখনও কিছু কিছু জায়গায় আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে, এবং দমকল কর্মীরা সেগুলো নেভানোর জন্য কাজ করছেন। এই আগুন লাগার ঘটনা একটি ব্যস্ত বাজার এলাকায় হওয়ায় এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে প্রশাসনিক সতর্কতা অবলম্বনের দাবি জানানো হচ্ছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।