দিল্লিতে সারা বছর বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ
দিল্লিতে বাজি ফাটানোর উপর কড়াকড়ি আরও কঠোর করার জন্য রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার আদালতের বেঞ্চ দিল্লির সরকারকে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে যে, সারা বছর রাজধানীতে বাজি কেনাবেচা এবং ফাটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা। এ ছাড়া, শীর্ষ আদালত দিল্লি পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে এবং তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
দিল্লির দূষণকে কেন্দ্র করে একটি মামলা শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেছেন, দীপাবলি কিংবা অন্যান্য উৎসবের সময়ই শুধু বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করা যথেষ্ট নয়। বরং সারা বছরই বাজি ফাটানো বন্ধ করা উচিত। আদালত মন্তব্য করেছে, দীপাবলির সময় বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি ‘চোখে ধুলো দেওয়ার মতো’। শীর্ষ আদালতের মতে, দূষণমুক্ত পরিবেশে বাস করার অধিকার প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার এবং এটি সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত। বাজি ফাটানোর কারণে পরিবেশে যে দূষণ সৃষ্টি হয়, তা মানুষের মৌলিক অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি আদালতে জানিয়ে বলেন, বাজি ফাটানোর ওপর কড়াকড়ি শুধুমাত্র অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্তই ছিল, কারণ এই সময়ে দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়। তবে শীর্ষ আদালত এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা প্রশ্ন করেছে, “কেন শুধুমাত্র এই কয়েকটি মাসে বাজি ফাটানোর ওপর কড়াকড়ি? সারা বছরই তো দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।”
প্রসঙ্গত, দীপাবলি এবং অন্যান্য উৎসবের সময় দিল্লিতে বায়ু দূষণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, তীব্র সর্দি, কাশি ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই বাজি ফাটানোর ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায় বলে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু, বাজি ফাটানো বন্ধ করার বিষয়টি বরাবরই রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এবার, সুপ্রিম কোর্টের মতে, শুধুমাত্র উৎসবের সময় বাজি ফাটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেই যথেষ্ট হবে না। আদালত আরও বলেছে যে, দিল্লির সরকার বাজি কেনাবেচা ও ফাটানোর ব্যাপারে সারা বছরই কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। এর মাধ্যমে রাজধানী শহরে বাস করা মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং পরিবেশের উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন পরিবেশ কর্মী, চিকিৎসক এবং নাগরিক সংগঠনগুলো সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করছে, দিল্লির বায়ু দূষণ রোধে সারা বছরের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। শহরের বায়ু মান এবং মানুষের স্বাস্থ্য বিবেচনা করে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, বাজি ফাটানোর বিরুদ্ধে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে, এটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
এবার দিল্লির সরকারের উপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা সারা বছরের জন্য বাজি নিষিদ্ধ করবে কিনা। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আদালতের দিকনির্দেশনা আসবে।
সত্যিই, দিল্লির পরিবেশ পরিস্থিতি এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই নির্দেশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শীর্ষ আদালত চাইছে যে, রাজধানী শহরের জন্য একটি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক, যাতে এখানে বসবাসকারী মানুষদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়।