ট্রুডোর পতনের ভবিষ্যদ্বাণী
বিশ্বের অন্যতম বিতর্কিত এবং প্রভাবশালী ধনকুবের ইলন মাস্ক কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে বড় মন্তব্য করেছেন। ট্রুডোর আসন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করে মাস্ক কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন আলোচনা উসকে দিয়েছেন।
মাস্কের সামাজিক মাধ্যমের ইঙ্গিত
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ তিনি ট্রুডোর পরাজয়ের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ৭ নভেম্বর একটি পোস্টে, কানাডার নাগরিক রবার্ট রোনিং ট্রুডোর বিরুদ্ধে মাস্কের সমর্থন চেয়ে লিখেছিলেন। এর উত্তরে মাস্ক নিশ্চিত করেছেন যে, আসন্ন নির্বাচনে ট্রুডোর পরাজয় অনিবার্য। মাস্কের এই মন্তব্য কানাডার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা বাড়িয়ে তুলেছে এবং একাধিক সমীক্ষা ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমার ইঙ্গিত দিয়েছে।
ট্রুডোর জনপ্রিয়তার নিম্নগতি এবং রাজনৈতিক জোট
জাস্টিন ট্রুডো ২০১৫ সাল থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে তিনি জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) সঙ্গে জোট বাঁধতে বাধ্য হন। তবে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের কারণে জনগণের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। দেশটির প্রায় ৬৮ শতাংশ নাগরিক বর্তমানে ট্রুডোর প্রতি অসন্তুষ্ট এবং কেবলমাত্র ২৭ শতাংশ কানাডাবাসী তাঁকে পুনরায় নির্বাচিত দেখতে চান।
কানাডার ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা এবং মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণী
ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা অনুযায়ী, ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি ২৬ শতাংশ সমর্থন পেতে পারে, যেখানে পিয়েরে পোইলিভরের কনজারভেটিভ পার্টি ৪২ শতাংশ সমর্থনের আশা করছে। এনডিপি তৃতীয় স্থানে থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এই সমীক্ষা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ট্রুডোর ক্ষমতা হারানো প্রায় নিশ্চিত। মাস্কের করা ভবিষ্যদ্বাণী তাই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কানাডার অর্থনৈতিক অবস্থা
ট্রুডোর শাসনকালে কানাডার অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। এই সময় মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কানাডার অর্থনীতি প্রধানত আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ট্রুডো সরকারের ওপর দেশবাসীর চাপ বেড়েছে। ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে, কানাডার সঙ্গে আমেরিকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা বলেছেন, যা কানাডার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ট্রুডোর ওপর জনমত আরও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
মাস্কের ট্রুডো-বিরোধী মনোভাবের কারণ
মাস্ক আগে থেকেই ট্রুডো সরকারের বিভিন্ন নীতি ও বিধিনিষেধের বিরোধিতা করেছেন। বিশেষত অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণে মাস্ক আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। এছাড়াও ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতা এবং তাঁর কানাডার বর্তমান সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাবও নতুন নয়। ট্রাম্পের শাসনকালে মাস্ক আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের সমর্থন জানিয়ে প্রচুর অর্থ খরচ করেছেন। তাই কানাডার আগামী নির্বাচনে তিনি ট্রুডোর বিরোধী পক্ষে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব
আগামী বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। সেই পরিস্থিতিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এক কঠিন আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন। কানাডার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে, এবং তাতে মাস্কের মতো প্রভাবশালী শিল্পপতির ইন্ধন থাকলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
ইলন মাস্কের মন্তব্য, কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা, এবং জনগণের অসন্তুষ্টি একত্রিত হয়ে কানাডার আগামী নির্বাচনে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে।