Monday, December 1, 2025

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ৫১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ, দ্রুত শুরু হবে বিচারপ্রক্রিয়া

Share

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন

গত ৮ আগস্ট রাতে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে বলে খবর। আদালত সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার থেকে শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারকের এজলাসে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রতিদিনই এই মামলার শুনানি হবে, যাতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা যায়।

তরুণী চিকিৎসকটির ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে সিবিআই দায়িত্ব নিয়েছে। কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করার পর আদালতের নির্দেশে সিবিআই এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সিবিআই অভিযোগ করেছে যে, সঞ্জয় রায়কে ‘বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স’ বা জীববিজ্ঞানের প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সঞ্জয়ের দেহের নমুনা এবং অন্যান্য ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টও সংগ্রহ করা হয়েছে। এই মামলায় মোট ১২৮ জনের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই আদালতে জানিয়েছে।

গত আগস্ট মাসের ৮ তারিখে আরজি কর হাসপাতালে ঘটে এই নৃশংস ঘটনা। তরুণী চিকিৎসকটি ওই রাতেই ধর্ষণ এবং খুনের শিকার হন। এরপর কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, এই মামলার তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই বলেছে, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ‘বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স’ মিলে গিয়েছে, যা তাকে ঘটনার সাথে যুক্ত করছে।

মামলার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক আগামী সোমবার থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই মামলায় আদালত সঠিক তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই মামলায় নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরাও সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে।

গত সোমবার, এই মামলায় চার্জ গঠন হয় এবং অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বক্তব্য শোনার পর আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। এরপর, প্রিজ়ন ভ্যানের মধ্যে জেলে ফেরার পথে সঞ্জয় সংবাদমাধ্যমের সামনে তার নির্দোষ থাকার দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে, আমি খুন এবং ধর্ষণ করিনি।” সে আরও দাবি করে যে, সরকার এবং তার ডিপার্টমেন্ট তাকে ভয় দেখাচ্ছে এবং তাকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তার দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে সব কিছু সাজানো হচ্ছে।

এই মামলা এখনও অনেক প্রশ্ন তুলে রেখেছে। বিশেষত, সঞ্জয় রায়ের অভিযোগ, যার বিরুদ্ধে সিবিআই বায়োলজিক্যাল প্রমাণ পেয়েছে, সে এখন পর্যন্ত তার দোষ স্বীকার করেনি। অন্যদিকে, সিবিআই তদন্তকারীরা দাবি করছেন যে, তারা যথেষ্ট প্রমাণ পেয়ে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। বর্তমানে, আদালত তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচারের দিকে এগোচ্ছে।

সাক্ষী হিসেবে যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের মধ্যে নির্যাতিতার পরিবারও রয়েছে, যা মামলার গুরুত্ব এবং সংবেদনশীলতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। রুদ্ধদ্বার (ইন ক্যামেরা) শুনানির মাধ্যমে মামলার বিস্তারিত প্রকাশ থেকে বিরত রাখা হবে, যা সাধারণত একান্ত গোপনীয়তায় করা হয়। এর মাধ্যমে আদালত নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে, যাতে তদন্তের প্রকৃত তথ্য জনসমক্ষে না আসে এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।

এখন পর্যন্ত এই মামলায় তদন্তের রিপোর্ট, প্রমাণ এবং সাক্ষ্য নিয়ে অনেক জল্পনা রয়েছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত আদালতের পক্ষ থেকে যদি যথাযথ বিচার করা হয়, তাহলে দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত হবে। সিবিআই এখনও এই মামলায় নতুন তথ্য সংগ্রহ করছে এবং তার ভিত্তিতে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ার ফলাফল শুধু এক তরুণী চিকিৎসকের হত্যার বিচারই নয়, বরং সমাজের মধ্যে নারী নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বিচার প্রক্রিয়ায় যদি দ্রুততার সাথে সঠিক ও ন্যায্য রায় আসে, তা সমাজের জন্য একটি বড় বার্তা হয়ে উঠবে।

Read more

Local News