ছটে রাতভর বাজি
কলকাতায় ছটপুজোর ভোরে দেখা গেল এক অবাক করা দৃশ্য। শহরের একাধিক জায়গায় ছটপুজোর উৎসব পালন করতে গিয়ে নিয়মের প্রতি এই উন্মাদনা ছিল না শুধুমাত্র, বরং একে অপরকে ছাড়িয়ে গিয়ে বেপরোয়া বাজি ফাটানো ও শব্দ দূষণের ঘটনা ঘটছিল। এ ঘটনায় রীতিমতো চিন্তিত সাধারণ মানুষ। এমনকি হাসপাতালে গেটের সামনেও বাজি ফাটানো হচ্ছিল, যেখানে কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
শুক্রবার সকালে আনন্দপুর থানার এলাকায়, যেখানে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল অবস্থিত, সেখানে একদল কম বয়সী ছেলে বাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করছিল। ট্র্যাফিক পুলিশ লাগানো একটি বোর্ডে “নো হর্ন জ়োন” বা “নিঃশব্দ এলাকা” লেখা ছিল, যেখানে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ, কিন্তু এর মধ্যেই বাজির তাণ্ডব চলছিল। সেখানকার সিভিক ভলান্টিয়ারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিলেন না। অভিযোগ ওঠে, থানার কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না আসলে তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই বলে জানান তিনি। এমনকি হাসপাতালের গেটের সামনেেও এই ধরনের বাজি ফাটানোয় তাদের কিছু হয়নি।
এটি একক ঘটনা নয়, ছটপুজোর এই বেপরোয়া উৎসব কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে। বৃহস্পতিবার থেকেই শহরের বিভিন্ন পাড়ায় সাউন্ড বক্স বাজানো শুরু হয়ে গিয়েছিল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শহরের প্রতিটি কোণায় বাজি ফাটানো হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে রাতের মধ্যে শব্দদূষণ বেড়ে যায়, যার ফলে শহরের একাধিক স্থানে ঘুমন্ত মানুষদের ঘুম ভেঙে যেতে থাকে। এমনই এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন কসবা এলাকার বাসিন্দারা। তারা অভিযোগ করেন, কালীপুজো ও পরবর্তী দিনগুলির তুলনায় ছটপুজোতে শব্দবাজির তাণ্ডব অনেক বেশি হয়েছে। এক বাসিন্দা বলেন, “পুলিশে ফোন করেছি, তারা বলেছিল একদিন তো মেনে নিতে হবে!”
বাইপাসের পঞ্চান্নগ্রাম এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তার বাড়ির দরজার সামনে বাজি ফাটানো হয়েছিল। তিনি অসুস্থ বাবা ও পোষ্য নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। দরজা-জানলা বন্ধ করেও শব্দ এড়ানো সম্ভব হয়নি। কাশীপুর এলাকার এক নাগরিক অভিযোগ করেন, সাউন্ড বক্সের শব্দে রাতভর তাঁকে অত্যন্ত কষ্ট দিয়েছে। তিনি যখন শব্দ কমানোর জন্য অনুরোধ করেন, তখন হামলার শিকার হন। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও কোনো সুরাহা মেলেনি।
এদিন ভোরে শহরের দুই বড় সরোবর—কাঁকুড়গাছি ও সুভাষ সরোবরের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা দেখা যায়। সুভাষ সরোবরের এলাকায় পুলিশের অফিসারেরা বলেছিলেন, তাঁরা সরোবর পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু বাইরে কোথায় কী হচ্ছে তা জানানো সম্ভব নয়। তবে দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের সব গেটের সামনে পুলিশি প্রহরা ছিল এবং সরোবরের কাছে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
এছাড়া, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ছটপুজোতে সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুটি ঘণ্টা শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানোর অনুমতি রয়েছে। তবে, এর কোনো প্রভাবই চোখে পড়ছিল না। যেহেতু আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, এই বাজি ফাটানোর কাণ্ডে গঙ্গাদূষণ রোধ করা নিয়ে পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন। গঙ্গায় দেদার ধূমপান ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
অথচ, শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসন সাফ জানিয়েছিল, তারা গঙ্গাদূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা বলেন, “গঙ্গাদূষণ রোধ করতে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে, তবে ছটপুজো উপলক্ষে গঙ্গায় দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে।” এই পরিস্থিতিতে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাস্তবে প্রশাসনের দৃশ্যত কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই।
লালবাজারের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছটপুজোর সকালে পুলিশের অভিযান চলেছে এবং নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মের শিকল ভাঙা চলেছে। পুলিশ বা প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তা সময়ই বলবে।