গাড়ি কেনার টাকা আত্মসাৎ
গত সপ্তাহে কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে, যার বিরুদ্ধে গাড়ি কেনার জন্য প্রদত্ত এককালীন টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। ধৃতের নাম জাহির আব্বাস খান, এবং তিনি বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা। বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। এই ঘটনার সাথে জড়িত আরও একজন অভিযুক্ত ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন, এবং তৃতীয় অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।
লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে একটি গাড়ি সংস্থার ক্যামাক স্ট্রিটের ডিস্ট্রিবিউটরের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগে বলা হয়, সংস্থার সিউড়ি এবং ইলামবাজারে দুটি অফিস রয়েছে যেখানে পণ্যবাহী গাড়ি বিক্রি করা হয়। কিন্তু এই অফিসের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে গত বছর তারা বেশ কয়েকটি ভারী পণ্যবাহী গাড়ি বিক্রি করার পর, তাদের দামের এককালীন প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি।
গাড়ির মালিকেরা মাসিক কিস্তি নিয়মিতভাবে প্রদান করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সংস্থার হিসাব অনুযায়ী সেই টাকা কোথাও গায়েব হয়ে যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করলে বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে শুরু করে। তদন্তে উঠে আসে যে, ওই অফিসের কিছু কর্মী ক্রেতাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ নিয়ে গাড়ি বিক্রি করছিলেন, কিন্তু সেই টাকা সংস্থায় জমা দেওয়ার পরিবর্তে তারা নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছিলেন।
যে রসিদগুলি গাড়ির মালিকদের দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিও ভুয়ো বলে অভিযোগ উঠেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে সেলিম নামে এক কর্মীকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার হয়, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে জাহির আব্বাস খানের নাম উঠে আসে।
পুলিশ জানায়, জাহিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ খুব গুরুতর। এই ধরনের অপরাধ শুধু অর্থনৈতিক প্রতারণা নয়, বরং সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের উপরও আঘাত হানে। যারা গাড়ি কেনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তারা যখন এইভাবে প্রতারিত হন, তখন তাদের জন্য এটি একটি বড় মানসিক আঘাত।
বর্তমানে, পুলিশ আরও তদন্ত চালাচ্ছে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত তৃতীয় অভিযুক্তের খোঁজে তৎপর রয়েছে। এর পাশাপাশি, তারা গাড়ির মালিকদেরও ডেকে শুনানি করছে যাতে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষের দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সততা এবং স্বচ্ছতার কতটা গুরুত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ী সংস্থাগুলোর উচিত তাদের কর্মীদের উপর নজর রাখা এবং নিশ্চিত করা যে, কোনও অবৈধ কার্যকলাপ না ঘটে। পুলিশের তদন্ত এবং যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে, আশা করা যায় যে এই ধরনের প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হলে, সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বাড়ানো এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। কেবলমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনেরও প্রয়োজন, যাতে সবাই মিলে প্রতারণার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারে।