Monday, February 24, 2025

ভারতের জন্য কে বেশি উপকারী: কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প?

Share

কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প?

আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার হোয়াইট হাউসে বসবেন কারা—কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প? এই প্রশ্নটি শুধু আমেরিকার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ভারতের জন্যও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে যিনি আসবেন, তার প্রভাব ভারতের কূটনীতি, বাণিজ্য, অভিবাসন নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।

বাণিজ্য নীতিতে পার্থক্য: কমলা বনাম ট্রাম্প

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বে আমেরিকার বাণিজ্য নীতি আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিক চুক্তির উপর গুরুত্ব পেয়েছে। যদি কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হন, তবে বাইডেনের বাণিজ্য নীতির এই ধারা বজায় থাকতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে। এর ফলে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকার বাণিজ্য নীতিতে একটি আগ্রাসী মনোভাব দেখা যেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা আসতে পারে। চিন থেকে আমদানি কমিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে এই সুবিধায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।

অভিবাসন নীতি এবং এইচ-১বি ভিসা প্রসঙ্গে ভারতের আশা-আশঙ্কা

ভারতের নাগরিকদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এইচ-১বি ভিসার নীতি। এই ভিসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য অপরিহার্য, কারণ এর মাধ্যমে ভারতীয় পেশাদাররা আমেরিকায় কাজের সুযোগ পান। রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি আনতে পারে, যা অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ কর্মীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন তুলনামূলক উদার বলে মনে করা হয়। কমলা হ্যারিসের মতো একজন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট হলে অভিবাসন নীতিতে কিছুটা শিথিলতা থাকতে পারে, যা ভারতীয় কর্মীদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। রিপাবলিকানদের অধীনে গড়পড়তা ৯০.৭ শতাংশ এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন দেওয়া হলেও ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টদের আমলে এই হার কিছুটা বেশি, ৯৪.৬ শতাংশ।

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বনাম চিরাচরিত শক্তি: কাকে বেছে নেবে আমেরিকা?

বিশ্বব্যাপী পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে, আর কমলা হ্যারিসও এই বিষয়ে আগ্রহী। তিনি চান জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ বান্ধব শক্তির দিকে মনোযোগ দিতে। ভারতও এই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে, কারণ ভারত কয়লা এবং পেট্রোপণ্যের ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর পথে হাঁটছে। ফলে হ্যারিস ক্ষমতায় এলে এই ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্প চিরাচরিত শক্তির উপর বেশি নির্ভর করতে চান, যা ভারতের জন্যও লাভজনক হতে পারে। ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসলে অপরিশোধিত তেলের দাম কমতে পারে, যা ভারতের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে সুবিধাজনক হবে।

প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: দুই প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি

চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমেরিকা এবং ভারতের যৌথ সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। কমলা হ্যারিস ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের প্রভাব কমাতে ইচ্ছুক এবং এই অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চান। অন্যদিকে, ট্রাম্প ‘কোয়াড’ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বন্ধন আরও মজবুত করতে চান, যা এশিয়া অঞ্চলে চিনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাবনা

কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ের ক্ষেত্রেই ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক মজবুত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কমলা প্রেসিডেন্ট হলে, তিনি ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতায় জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য এবং শক্তি নীতির কারণে কিছু সুবিধা এলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

যদিও কোন প্রার্থীর ক্ষমতায় আসা ভারতের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে নির্বাচনের ফলাফল ভারতের জন্য অনেকদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

Read more

Local News