নৈহাটিতে নির্বাচনী উত্তেজনা
নৈহাটি বিধানসভার আসন্ন উপনির্বাচন কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-র সমর্থনে কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল ক্লাবের কর্তাদের স্পষ্ট বার্তা। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিংয়ের উচ্চপদস্থ কর্তারা সনৎকে সমর্থন জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে আইএফএ (ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) সচিব অনির্বাণ দত্তের বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য, যেখানে তিনি সনৎ দের ফুটবলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলেছেন।
ফুটবল ও রাজনীতির সম্পর্ক
বাংলাদেশের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও ফুটবল ও রাজনীতির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ক্লাবগুলির সঙ্গে রাজনীতিকদের যোগাযোগের নজির বহু পুরনো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতার তিনটি প্রধান ক্লাবের কর্তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ে বিদেশ সফরের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। তবে এতদিন এই সম্পর্কগুলো সাধারণত ব্যবসায়িক ও সামাজিক ভিত্তিতে ছিল। তবে এবার সরাসরি একটি রাজনৈতিক প্রার্থীর সমর্থন জানানো একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।
সনৎ দে’র প্রভাব
কলকাতার তিনটি প্রধান ক্লাবের কর্তাদের সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে সনৎ দে’র ফুটবলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা একটি বড় কারণ। ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার, মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত এবং মহমেডান কর্তা কামারুদ্দিন সনৎকে সমর্থন দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ফুটবল সংগঠক হিসেবে অপরিহার্য। তাঁদের মতে, সনৎ বিভিন্ন সমস্যায় ক্লাবগুলির জন্য সমাধান দিয়েছেন এবং তিনটি ক্লাব যখনই নৈহাটিতে খেলতে গেছে, তখন তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আইএফএ’র বার্তা
আইএফএ’র সচিব অনির্বাণ দত্তও সনৎ দে’র সমর্থনে তাঁর বক্তব্যে বলছেন, “ফুটবলের স্বার্থে সনৎ দে’র ভূমিকা অনস্বীকার্য।” ভিডিওতে প্রাক্তন ফুটবলার সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় সনৎকে বিপুল ভোটে জেতানোর আবেদন জানিয়েছেন। এই বার্তাগুলি তৃণমূলের প্রচারণার জন্য শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।
আরজি কর আন্দোলন এবং ফুটবল প্রভাব
নৈহাটিতে ফুটবল ময়দানের উন্নয়নের জন্য সনৎ দে’র ভূমিকা ও ফুটবল কমিউনিটির সহযোগিতা রাজনৈতিক প্রচারে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আরজি কর আন্দোলন এবং পূর্বে যে বড় ম্যাচ বাতিল হয়েছিল, তার ক্ষত কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা হিসেবে এই সমর্থনকে দেখা হচ্ছে। কলকাতা ময়দানের ইতিহাসে এমন সহযোগিতা আগে দেখা যায়নি।
রাজনীতির ময়দানে ক্লাবগুলির ভূমিকা
এদিকে, কলকাতার ফুটবল ক্লাবগুলির রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিরোধীরা প্রায়শই তৃণমূলের সঙ্গে ক্লাবের নেতাদের সম্পর্কের সমালোচনা করে থাকেন। তবে, সনৎ দে’র সমর্থনে তিনটি ক্লাবের একযোগে বক্তব্যের নজির তৈরি হওয়া রাজনৈতিক চিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ফুটবলের ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ
তৃণমূলের পক্ষ থেকে ফুটবল ক্লাবগুলোর সমর্থন নিতে পারা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ ধরনের সহযোগিতা আগে কখনও হয়নি, যা স্পষ্ট করে যে রাজনীতি ও খেলাধুলার সম্পর্ক কতটা গভীর। ফুটবলের প্রতি এই আকর্ষণ এবং ক্লাবগুলোর সমর্থন, আগামীতে নির্বাচনী ময়দানে কিভাবে ফুটবল সম্প্রদায়ের ভূমিকা আরও বাড়তে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।
সনৎ দে’র পক্ষে এই ধরনের সমর্থন তাকে নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী অবস্থান দেবে বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ফলস্বরূপ, নৈহাটির নির্বাচনটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং কলকাতার ফুটবল সংস্কৃতির একটি পরীক্ষাও হয়ে দাঁড়াবে।

