Monday, December 1, 2025

পোশাক খুলে প্রতিবাদ, ইরানে তরুণীর মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ শুরু

Share

পোশাক খুলে প্রতিবাদ ইরানে

ইরানে পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এক তরুণী যখন নিজের পোশাক খুলে শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হাঁটছিলেন, তখন তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ পুরো দেশকে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশ্যে এমন অঙ্গীকারবদ্ধ প্রতিবাদ করার জন্য ওই তরুণীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যার পরই দেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ। অনেকেই এই তরুণীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন, আর পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়ে তরুণীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, “তরুণী হেফাজতে থাকা অবস্থায় যেন তাঁর ওপর কোনো ধরনের অত্যাচার করা না হয়, তার জন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।” অ্যামনেস্টির বক্তব্য, তরুণী যাতে তাঁর পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রেফতারের সময় তরুণীকে মারধর ও যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

রাষ্ট্রপুঞ্জের দৃষ্টি

এদিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি মাই সাটো জানিয়েছেন, তাঁরা এই ঘটনার দিকে নজর রাখছেন। তরুণীর অন্তর্বাস পরে হাঁটার একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি লেখেন, “এই ঘটনাটির দিকে আমরা লক্ষ্য রেখেছি। বিশেষ করে ইরান সরকারের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।” এই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, ইরানের মানুষ তাদের অবস্থান জানানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে নেমেছেন।

প্রতিবাদের দৃশ্যমানতা

শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণী শুধু অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসে হাঁটছেন, যখন অন্য মহিলারা সম্পূর্ণ হিজাব পরে রয়েছেন। ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক এবং এই কঠোর পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এই তরুণী এমন সাহসী পদক্ষেপ নেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ দাবি করেছিল যে, তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ এবং তাঁকে নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা আটক করা হয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায়, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা দেশজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

এই ঘটনা ইরানের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ দিক উন্মোচন করে। ২০২২ সালে ইরানে ১৯ বছর বয়সী মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে অগ্নি লাগিয়েছিল। পোশাকবিধি না মানার অভিযোগে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে আটক করেছিল, এবং পরে তাঁর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। মাহশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি হিজাব ঠিকভাবে পরেননি। তাঁর মৃত্যুর পর ইরানে নারীরা প্রতিবাদে বেরিয়ে এসে হিজাব পোড়ানো এবং মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ করেছিলেন। ইরান সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করা হয়।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

তরুণীর গ্রেফতারের পর থেকেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইরানের সরকার জানায়, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং অস্থিতিশীলতা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কিন্তু এই ঘটনা ইরানের নারীদের জন্য নিপীড়নের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে।

সামনের দিনগুলি

এই ঘটনার পর, ইরানের সরকারের প্রতিক্রিয়া কি হবে এবং তরুণীর মুক্তি নিয়ে কিভাবে পরিস্থিতি পাল্টাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ইরান, যেখানকার নারীরা ক্রমাগত নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন, সেখানে এই ধরনের প্রতিবাদগুলি একটি নতুন প্রজন্মের সাহসিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদের এই রূপ হয়তো ইরানের সমাজের মধ্য দিয়ে একদিন বড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

এই ঘটনা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, পরিবর্তনের জন্য সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয়, এবং নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। বিশ্বজুড়ে সকলেই এখন ইরানের তরুণীর মুক্তি এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

Read more

Local News