Monday, February 24, 2025

মালদহে যুগলকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মার, বসল সালিশি সভা, রুখতে গিয়ে মার খেল পুলিশও, চাঞ্চল্য

Share

মালদহের কালিয়াচকে সম্প্রতি একটি ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে একটি যুগলকে পরকীয়া সন্দেহে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর গ্রামে, যেখানে গ্রামবাসীরা তাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করে এবং সালিশি সভা ডেকে ওই যুগলের শাস্তি নির্ধারণ করে।

সন্দেহের শুরু

মঙ্গলবার রাতে, এক যুগলকে আমবাগানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে গ্রামের লোকজন তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করেন। এই সন্দেহ থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। গ্রামবাসীরা দ্রুত ওই যুগলকে আটক করে এবং তাদের শাস্তি দিতে সালিশি সভার আয়োজন করেন। সেখানেই তাদেরকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সালিশি সভার মঞ্চ

সালিশি সভার পরিণতি মারাত্মক ছিল। যুগলকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর শুরু হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশকে আটকানো হয় এবং উত্তেজিত জনতার সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।

পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ

পুলিশ যখন যুগলকে উদ্ধার করতে আসে, তখন গ্রামবাসীরা পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালান। অভিযোগ উঠেছে, তাদেরকে মারধর করা হয় এবং ইট-পাথর ছোড়া হয়। আইসি সুমন রায়চৌধুরীর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।

পুলিশের অভিযানের ফলাফল

এই ঘটনার পর, পুলিশ ওই যুগলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নিগৃহীত তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন এবং পথে ওই যুবকের সঙ্গে দেখা হলে কথা বলছিলেন। তবে গ্রামবাসীরা এদের কথোপকথনকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেছিলেন।

আইসির বক্তব্য

আইসি সুমন রায়চৌধুরী ঘটনাটি সম্পর্কে বলেন, “যুগলকে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ শেরপুর এলাকায় গিয়েছিল। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করার সময় পুলিশের উপর হামলা হয়। জনতাদের হাতে ধারালো অস্ত্র, পাথর এবং লাঠি ছিল। এর ফলে এক পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হন। আমরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করেছি এবং হামলাকারীদের মধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।”

সমাজের চিন্তার উদ্রেক

এটি স্পষ্ট যে, আমাদের সমাজে এখনও অতি প্রচলিত কিছু ধারণা বিদ্যমান, যা প্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। একজন যুগলকে প্রকাশ্যে নিগৃহীত হওয়া এবং পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা ঘটনায় বোঝা যায় যে, গ্রামের সমাজে এখনও অনেক অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বিরাজমান।

সামনের পথ

এখন এই ঘটনায় গ্রামে কি ধরনের পরিবর্তন আসবে, সেটাই দেখা হবে। সামাজিকভাবে শিক্ষিত এবং সচেতন হতে হবে আমাদের। আসন্ন ভবিষ্যতে, স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কালিয়াচকে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সমাজের জন্য একটি জাগরণীর বার্তা, যেখানে মানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি।

Read more

Local News