দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে নোংরা জল
দিল্লির জল সংকট ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অপরিশ্রুত ও নোংরা জল সরবরাহের অভিযোগে উদ্বিগ্ন হয়ে এবার মাঠে নামলেন আম আদমি পার্টির (আপ) সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল। দ্বারকা ও সাগরপুরের মতো এলাকায় অপরিশ্রুত জল সরবরাহের সমস্যাকে সামনে রেখে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতীশীর বাড়ির সামনে সেই নোংরা জল ঢেলে প্রতিবাদ জানালেন। স্বাতীর মতে, দীর্ঘদিন ধরে জল সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাই জনস্বার্থে এই পদক্ষেপ নিতেই তিনি বাধ্য হয়েছেন।
জল সরবরাহ সংকটের অভিযোগে স্বাতীর প্রতিবাদ
দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে ময়লা এবং দুর্গন্ধযুক্ত জল সরবরাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে বহু দিন ধরেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই জল দিয়ে খাবার রান্না তো দূরে থাক, দৈনন্দিন কাজ করাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এই সমস্যা সরেজমিনে যাচাই করার জন্য আপ সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল সম্প্রতি দ্বারকা অঞ্চলের কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, কিছু কল থেকে সত্যিই কালো এবং দুর্গন্ধযুক্ত জল বেরোচ্ছে। এই অবস্থায় তিনি নিজে এক বোতল জল সংগ্রহ করেন এবং তা নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে সেই জল ঢেলে দেন।
স্বাতী মালিওয়াল এই প্রতিবাদ সম্পর্কে জানান, “সাগরপুর এবং দ্বারকার বাসিন্দারা আমাকে ফোন করে তাদের সমস্যার কথা জানান। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, সত্যিই এই জল কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য নয়। তাই আমি এই জল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ঢেলে দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম, জনগণের কী অবস্থার মধ্যে তারা বাস করছেন।“
১৫ দিনের সময়সীমা: না হলে ট্যাঙ্কারভর্তি জল নিয়ে হাজির হবেন
স্বাতী মালিওয়াল কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি জলের সমস্যা সমাধান না করা হয়, তাহলে তিনি আরও বড়ো আকারে এই প্রতিবাদ করবেন। তিনি স্পষ্ট করেন, এইবার একটি ছোট বোতলে জল এনে দেখিয়েছেন, তবে পরিস্থিতি না বদলালে তিনি ট্যাঙ্কারভর্তি নোংরা জল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়াবেন। তার কথায়, “এই জলই দিল্লিবাসী প্রতিদিন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী চাইলে নিজেই এই জল পান করতে পারেন বা ব্যবহার করতে পারেন।”
দায়িত্বে থেকেও কেন নিরব মুখ্যমন্ত্রী ও বিধায়ক?
স্বাতী মালিওয়াল কেবল মুখ্যমন্ত্রীকেই আক্রমণ করেননি; তার নিশানায় ছিলেন দিল্লি জল বোর্ডের সহসভাপতি এবং দ্বারকার বিধায়ক বিনয় মিশ্রও। স্বাতী প্রশ্ন তোলেন, দ্বারকার মতো বড়ো একটি এলাকায় এত জল সংকট থাকা সত্ত্বেও, কীভাবে স্থানীয় বিধায়ক এবং জল বোর্ডের সহসভাপতি এই বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না? তিনি আরও বলেন, “যেখানে জনগণের এমন ভোগান্তি চলছে, সেখানে তাদের প্রতিনিধিদের আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করছেন।“
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং স্বাতীর বার্তা
স্বাতী মালিওয়ালের এই প্রতিবাদ দিল্লির রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় তৈরি করেছে। আপ দলের জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন যে, সরকারের পক্ষ থেকে এই সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চলছে এবং খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই ধরনের একটি প্রতিবাদের মাধ্যমে রাজধানীর জল সংকটের বিষয়টি আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে এবং প্রশাসনের উপর জনগণের চাপে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাতীর এই প্রতিবাদকে অনেকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, কারণ তিনি জনগণের স্বার্থে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। রাজধানী দিল্লির মতো এক শহরে যেখানে বিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার, সেখানে এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন নিরাপদ জল ব্যবহারের দাবিতে সরব হলেও, প্রশাসনের উদাসীনতা বহুদিনের।
দিল্লির ভবিষ্যৎ এবং জল সংকটের সম্ভাব্য সমাধান
স্বাতী মালিওয়ালের এই প্রতিবাদ আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাজধানী দিল্লির বাসিন্দারা জল সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভর করছেন। এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে, তা জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকারকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
দিল্লির জল সংকট সামাধানের জন্য প্রশাসনের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জনস্বার্থের এই দাবির সামনে প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।