ইরানে ইজ়রায়েলের বিমান হানায় ধ্বংস রাশিয়ার ‘এস-৩০০’
সাম্প্রতিককালে ইজ়রায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের ‘এস-৩০০’ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, এই ঘটনায় রাশিয়ার অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিমানহানার ফলে ইরানী সেনাবাহিনী যে রাশিয়ার তৈরি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) হাতে থাকা মোট চারটি ‘এস-৩০০’ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ধ্বংস করা হয়েছিল, এবং বাকি তিনটি অক্টোবরে একাধিক হামলায় নিঃশেষিত হয়েছে। যদিও ইরানি কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে ইজ়রায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে তারা ইরানের আকাশে মুক্তভাবে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হয়েছে।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তার মন্তব্য অনুযায়ী, ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী এস-৩০০ কে পুরোপুরি অকার্যকর করে দিয়েছে। তারা বলছেন, “এই হাতিয়ারের দুর্বলতা পরিষ্কার হয়ে গেছে।” এতে করে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তারাও একমত হচ্ছেন যে ইরানী বাহিনী কোনও ইজ়রায়েলি বিমানকে ধ্বংস করতে পারছে না, যা তাদের আকাশ সীমা রক্ষায় একটি বড় সমস্যা তৈরি করেছে।
‘টাইমস অফ ইজ়রায়েল’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইজ়রায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের কয়েকটি বায়ু প্রতিরক্ষা স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল রাজধানী তেহরানের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা। বিশ্লেষকদের মতে, ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী উচ্চ প্রযুক্তির জ্যামার ব্যবহার করে এস-৩০০-এর রাডারকে অকেজো করে তারপর হামলা চালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলার ফলে ইরানকে রুশ অস্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এক সময় সোভিয়েত রাশিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া এবং গ্রিসের সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত এই এস-৩০০ বর্তমানে অনেক দেশেই প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ইরান এখন আরও উন্নত বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খোঁজার জন্য মস্কোর দিকে আবারও নজর দিতে পারে, বিশেষ করে তাদের উন্নত সংস্করণ ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ এর দিকে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই রাশিয়ার বিভিন্ন অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে আমেরিকা ও পশ্চিমি দেশগুলোর তৈরি অস্ত্রগুলি বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার ‘জ্যাভলিন’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘আর-৩৬০ নেপচুন’ অ্যান্টিশিপ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের হাতে রুশ ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে।
এদিকে, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা কিছু অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেছে। যেমন, ‘জ়িরকম’ হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র যা শব্দের থেকে ছ’গুণ বেশি গতিতে চলতে সক্ষম। এই অস্ত্রের জন্যই পশ্চিমি দেশগুলি সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারছে না।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী বর্তমানে ‘এস-৪০০’ এবং ‘এস-৫০০’ নামক আরও উন্নত বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে, যা মূল রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালানো কঠিন করে তুলেছে। সাম্প্রতিক ঘটনার ফলে ইরান, রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য নতুন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে পারে, কারণ তাদের প্রথাগত বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলি হামলার ফলে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী দিনে প্রতিরক্ষা সামগ্রীর ক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে। ইরান যে আরও উন্নত ও কার্যকরী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দিচ্ছে, তা স্পষ্ট। রাশিয়ার অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ায়, বিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ নতুন পরিকল্পনা করতে বাধ্য হচ্ছে।

