রাত বাড়তেই বাড়ল দূষণ
প্রতি বছর দীপাবলি এবং কালীপুজোর রাতে কলকাতার আকাশে গড়গড় করে শব্দবাজির তাণ্ডব চলে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও শব্দদূষণের লাগাম টানা সম্ভব হয় না। এ বছরও পরিস্থিতি একই ছিল। রাত যত বাড়ছে, ততই বেড়েছে শব্দের মাত্রা, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এমনকি আরজি কর হাসপাতাল চত্বরেও শব্দদূষণ প্রতিরোধ করা যায়নি।
দীপাবলির রাতে কলকাতায় শব্দবাজির দাপট ছিল চরমে। রাত ১২টার দিকে আরজি কর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় শব্দের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ২২ ডেসিবেল বেশি ছিল। আরজি কর হাসপাতালের পরিবেশ গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে হাসপাতালের নাম মুখে মুখে ফিরছিল। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে দীপাবলির রাতে হাসপাতালের কাছেও শব্দের তাণ্ডবের চিত্র ছিল ভিন্ন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরে কলকাতার কসবায় সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ রেকর্ড করা হয়। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে শব্দের মাত্রা দিনের বেলায় ৭৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত, কিন্তু রাত ১২টায় তা গিয়ে পৌঁছায় ১০৪.৬ ডেসিবেলে। হাসপাতালের কাছে থাকার পরেও পরিস্থিতি ভালো হয়নি। নিউ মার্কেট এলাকায় রাত ১২টা ২০ মিনিটে শব্দের মাত্রা ছিল ৭০.৭ ডেসিবেল, বাগবাজারে ৮২.৫ ডেসিবেল, টালিগঞ্জে ৭৮.৮ ডেসিবেল, এবং সল্টলেকে ৫৬.১ ডেসিবেল রেকর্ড হয়েছে।
অন্যদিকে, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা হিসেবে যা ‘সাইলেন্স জোন’ হিসেবে চিহ্নিত, সেখানে শব্দের মাত্রা রাতের বেলায় ৪০ ডেসিবেল ছাড়ানোর কথা নয়। কিন্তু শাসকদলের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জনসমাগমের মধ্যে শব্দের দাপট অব্যাহত রইল। এর ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অশান্তি সৃষ্টি করেছে।
এ বছরের দীপাবলি এবং কালীপুজোতে প্রশাসন শর্ত জারি করেছিল, কিন্তু বাস্তবে তার প্রভাব পড়েনি। এ ধরনের শব্দদূষণ নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানকে ক্ষুণ্ণ করছে, যা আমাদের সামাজিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য বিপজ্জনক।
রাত ১টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত কসবায় শব্দের মাত্রা ১০৩.২ ডেসিবেলে পৌঁছেছে, যেখানে সল্টলেকে ৫৭ ডেসিবেল, টালিগঞ্জে ৭৩.৪ ডেসিবেল এবং বিরাটিতে ৫৬.৮ ডেসিবেল ছিল। এটি স্পষ্ট, সরকার যে শব্দদূষণ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটছে না।
অবশেষে, ভোরের দিকে শব্দদূষণের মাত্রা কমে আসে, কিন্তু এখনও শহরের বিভিন্ন এলাকায় শব্দের প্রভাব স্পষ্ট ছিল। সকাল ৪টা ১০ মিনিটে বাগবাজারে শব্দের মাত্রা ছিল ৭০.৯ ডেসিবেল, কসবায় ৮১.২ ডেসিবেল, এবং নিউ মার্কেটে ৬৯ ডেসিবেল রেকর্ড হয়েছে।
এভাবে বছরের পর বছর প্রশাসন আশ্বাস দেয়, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোনও প্রভাব পড়ে না। শব্দদূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, আমাদের শহর ও পরিবেশ এই দূষণের শিকার হতে থাকবে।

