Monday, December 1, 2025

নাগরিক আন্দোলন ‘স্তিমিত’, জুনিয়র ডাক্তারদের পাল্টা আক্রমণে তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের সক্রিয়তা

Share

নাগরিক আন্দোলন

গত প্রায় তিন মাস ধরে নাগরিক আন্দোলন ‘স্তিমিত’ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই প্রবীণ তৃণমূল নেতারা নিজেদের ‘খোলস’ ছেড়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই পাল্টা আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন সৌগত রায় ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সুর চড়িয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন।

আরজি করের ঘটনা ঘটার পর কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন শহরে যে ‘দলহীন’ গণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা শাসক দলের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দেয়। তৃণমূলের এক সাংসদ প্রকাশ্যে বলেন, তিনি বাড়ি থেকে বের হননি। অন্য একজন সাংসদ জানিয়েছেন, তিনি মেয়েদের রাত দখল আন্দোলনে যোগ দিতে চান, কিন্তু কটূক্তির শঙ্কায় তা করতে পারেননি।

এর মধ্যে যারা আগে থেকেই মুখ খুলেছেন, তাঁদের মধ্যে কুণাল ঘোষ ও অরূপ চক্রবর্তী অন্যতম। কুণাল ঘোষ কলকাতার বুকে যখন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পেছনে বামেরা রয়েছেন বলে দাবি করছেন, তখন জেলা থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও উদয়ন গুহও বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মতামত জানাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন প্রবীণ নেতাদের পাল্টা আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে সৌগত রায় ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে।

তাঁরা কেন এতদিন নীরব ছিলেন, সে বিষয়ে দলের এক নেতা মন্তব্য করেছেন যে আরজি করের নির্যাতিতার বাড়ি সৌগত রায়ের দমদম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রের পাশেই। তাই হয়তো তাঁরা প্রতিবাদে সরাসরি অংশ নিতে সাহস পাননি।

জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহারের পরদিনই সৌগত রায় বলেছেন, “এরা যতীন দাস বা মহাত্মা গান্ধী নন। পাঁচ দিন অনশন করে এঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।” শোভনদেবও প্রশ্ন তুলেছেন, “এই আন্দোলনের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসছে?” তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতালে দালালরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। লাইনে বসলে সিট পাবেন না, কিন্তু ৫০ হাজার টাকা দিলে সিট পাবেন।” এর মাধ্যমে তিনি ডাক্তারদের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

তবে, শোভনদেবের বক্তব্যে পরোক্ষভাবে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তোলার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, তিনি বলেছেন, এসএসকেএম হাসপাতালের চারপাশে দালালদের ভিড় রয়েছে।

এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের তীব্রতা কমে গেছে এবং সিবিআই তদন্তের প্রাথমিক চার্জশিটে ‘গণধর্ষণ’-এর উল্লেখ না থাকায় শাসকদল কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, এই পরিস্থিতিতে পাল্টা আক্রমণ আরো জোরালো করা উচিত। কারণ, সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে, আর এর প্রভাব ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁদের ওপর পড়তে পারে।

এক মন্ত্রীর মতে, “আক্রমণই সেরা রক্ষণ।” এই কৌশল অনুসরণ করে দলের কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার চেষ্টা চলছে, বিশেষ করে ছ’টি আসনের উপনির্বাচনের প্রেক্ষাপটে। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনের শক্তি রক্ষা করাটাই তৃণমূলের জন্য প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটি পরিষ্কার, প্রবীণ নেতাদের এই সক্রিয়তা শুধু তাদের দলের প্রতীকী শক্তি প্রদর্শনই নয়, বরং আগামীর নির্বাচনী যুদ্ধে তাদের অবস্থানকে দৃঢ় করার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপও।

Read more

Local News