নবান্নের আশ্বাস
নবান্নের পক্ষ থেকে পুনরায় আশ্বস্ত করা হলো, আবাস তালিকার ক্ষেত্রে যোগ্য কেউ বাদ পড়বে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আবাসের তালিকায় গণ্ডগোলের কারণে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে নবান্নের তরফে মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তালিকা থেকে কারও নাম বাতিল করার আগে দ্বিগুণ নিশ্চিত করা হবে।
আবাস তালিকার বিতর্ক
রাজ্যের আবাস যোজনার চূড়ান্ত পর্যায়ের সমীক্ষা শুরু হয়েছে, কিন্তু এই সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক যেন থামছে না। গত বছর দুর্গা পুজোর সময় থেকেই শুরু হয়েছিল বিতর্ক, চলতি বছরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে বিজেপি উৎসব থেকে দূরত্ব রেখেছিল। কিন্তু কালী পুজো আসতেই তৃণমূল কংগ্রেসকে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মধ্যে আবাস তালিকার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শাসকদলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাধ্যমে আবাসের ঘর পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেছেন, তালিকায় নাম রাখতে পাকা বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ীভাবে গোয়াল ঘরে থাকতে হচ্ছে।
নবান্নের নতুন নির্দেশিকা
এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে নবান্ন বৈঠকে বসেছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, মানবিক ভিত্তিতে সার্ভে করতে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ অর্থ দেওয়ার কথা। দিল্লি সেই টাকা দেয়নি। তাই গরিব মানুষের স্বার্থে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাড়িগুলো তৈরির জন্য টাকা রাজ্যই দেবে।’’ তিনি আরও জানান, তালিকায় নাম থাকা উপভোক্তাদের বর্তমান বাড়ির সামনে উপস্থিত থাকতে হবে, যাতে তাঁদের ছবি এবং বাড়ির ছবি নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করা যায়।
জনগণের ক্ষোভ
এদিকে, বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে দেখা গেছে, এক তৃণমূল নেতা আবাস যোজনার তালিকায় নিজের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। মাসাদুল মণ্ডল জানান, তাঁর পাকাবাড়ি রয়েছে এবং তাই তিনি চাইছেন, তাঁর জায়গায় অন্য কেউ ঘর পাক। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে, শুধুমাত্র শাসকদলের নেতারাই নন, বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষও এই আবাস যোজনার বিষয়ে প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছেন।
উপনির্বাচনের প্রভাব
রাজ্যের পাঁচ জেলা বাদে সর্বত্র আবাস যোজনার সমীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে নেতা, বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। সমীক্ষার জন্য উপভোক্তাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হলেও পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। রাজ্য জানিয়েছে, কর্মসূত্রে বাইরে থাকা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও নিকট আত্মীয় উপস্থিত থাকলেই হবে। তবে দ্বিতীয় দফার ভেরিফিকেশনের সময়ে ওই শ্রমিকদের উপস্থিতি অপরিহার্য।
সমাধানের পথে
নবান্নের তরফে দাবি করা হচ্ছে, অযথা উদ্বেগের কারণ নেই। সকল তালিকাভুক্ত মানুষ মাথাপিছু এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা পাবেন। মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’’ এর ফলে আশা করা যায় যে, সরকারের এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করলে, যারা যোগ্য, তারা আবাস তালিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না।