Monday, February 24, 2025

সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি! ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন সন্দীপরা, আশঙ্কা, সিজিও অভিযানে জুনিয়র ডাক্তাররা

Share

জুনিয়র ডাক্তাররা

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা তরুণীর জন্য বিচারের দাবিতে বুধবার সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানে নামলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। সাধারণ মানুষও এই কর্মসূচিতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সিবিআই তদন্তে প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। তাঁদের এই উদ্যোগ সিবিআইকে ‘চাপে’ রাখার জন্য।

সিজিও অভিযানে জমায়েত

বুধবার বিকেল থেকে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে। অন্তত ৮০টি সংগঠন একত্রিত হয়ে আরজি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবি জানাতে সল্টলেকে জমায়েত করে। সিবিআই দফতরের সামনে তারা একটি পথসভা করে এবং সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মশাল মিছিল করেন।

জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন, জুনিয়র ডাক্টর্স ফ্রন্ট (জেডিএফ), এই অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা অভিযোগ করেন যে, আরজি করের ঘটনার তদন্ত এখন সিবিআইয়ের হাতে, এবং তাদের এই সিজিও অভিযান সিবিআইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে। একই সময়ে শিয়ালদহেও পাল্টা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

শিয়ালদহের প্রতিবাদ

শিয়ালদহে পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউবিজেডিএ) অভিযান শুরু করে। এনআরএস হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু করে শিয়ালদহ আদালত পর্যন্ত তারা জমায়েত করে। সেখানে তারা নির্যাতিতার জন্য বিচার ত্বরাণ্বিত করার দাবি জানায়।

সিজিও অভিযানের তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট

সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং সিবিআইয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো এক ছাতার তলায় এসে ‘অভয়া মঞ্চ’ নামে সংগঠন গঠন করেছে। এই মঞ্চের আওতায় তারা সিজিও পর্যন্ত হাঁটেন এবং রাত ৮টার পরে সেখানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

জুনিয়র ডাক্তাররা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি এবং প্রমাণের অভাবে সন্দীপ ঘোষ, যিনি আরজি কর-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন, ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, “আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই প্রথম থেকেই ঢিলেমি করছে। এর ফলে সন্দীপ ঘোষ ছাড়া পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “গত ২১ তারিখে আদালতে এই সংক্রান্ত শুনানিতে সন্দীপকে হাজিরও করা হয়নি। সিবিআইয়ের গা-ছাড়া মনোভাব সত্যিই উদ্বেগজনক।”

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। এক সাধারণ নাগরিক বলেন, “যিনি গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি একা এই কাজ করতে পারেন না। এর পিছনে আরও বড় মাথারা রয়েছেন। যতদিন না তাঁদের ধরা হচ্ছে, আমরা রাস্তায় থাকব।”

জেডিএফ এবং জেডিএর মধ্যকার দ্বন্দ্ব

জেডিএফ (জুনিয়র ডাক্টর্স ফ্রন্ট) এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেবাশিস, অনিকেত মাহাতো এবং কিঞ্জল নন্দেরা সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে উঠছেন। তারা ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় ১৭ দিন অনশনও করেছেন। তাদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ বা ‘হুমকি সংস্কৃতি’র মোকাবিলা করা।

জেডিএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, তারা হুমকি এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছে। পাল্টা সংগঠন গড়ে উঠেছে ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (জেডিএ)’, যা মূলত জেডিএফ-এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তারা আট দফা দাবিতে মুখ্য সচিব মনোজ পন্থকে ইমেল পাঠিয়েছে।

সিবিআইয়ের কার্যকরী পদক্ষেপের অনুরোধ

সবার প্রত্যাশা, সিবিআই দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আদালতে মামলার শুনানির সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী অনেক সময় ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছেন না, যার ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। শ্রীশ চক্রবর্তী, যিনি জেডিএ’র অন্যতম আহ্বায়ক, বলেন, “আমরা চাই দোষীরা কঠোরতম শাস্তি পাক। রোগী পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি এবং নির্যাতিতার জন্য বিচার ত্বরাণ্বিত করার দাবি নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তাঁদের এই সংগ্রাম শুধু এক তরুণীর জন্য নয়, বরং সারা সমাজের জন্য একটি প্রতীক। সকলের আশা, তারা সফল হবে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে।

Read more

Local News