Friday, February 7, 2025

জন্মগত ত্রুটি সারিয়ে সুস্থ হল চার দিনের শিশু

Share

চার দিনের শিশু

কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে গত ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা এক সদ্যোজাত শিশুকে চিকিৎসকরা সফলভাবে সুস্থ করে বাড়িতে পাঠিয়েছেন। শিশুটির মা মর্জিনা খাতুন এবং বাবা মহম্মদ মনিরুল ইসলামের এই সন্তানের জন্মের পর থেকেই কিছু সমস্যা দেখা দেয়। শিশুটির দুধ গিলতে সমস্যা হচ্ছিল, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে ইউএসজি (আল্ট্রাসোনোগ্রাফি) করার পর জানা যায়, শিশুটির একটি জন্মগত ত্রুটি রয়েছে।

শিশুটির চিকিৎসকরা জানান, এই ত্রুটির নাম ‘ইন্টেস্টিনাল ম্যালরোটেশন’। এটি জন্মগত একটি অবস্থা যেখানে ভ্রূণ গঠনের সময় পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি সঠিকভাবে গঠিত হয় না। এর ফলে অন্ত্রের মাধ্যমে খাবার যাওয়ার পথ আটকে যায়। শিশুটির ক্ষেত্রে অন্ত্রটি এমনভাবে পেঁচানো ছিল যে, দুধ খাদ্যনালিতে প্রবাহিত হতে পারছিল না। প্রতিবার স্তন্যপান করানোর সময় শিশুটি পিত্তবমি করছিল, যা চিকিৎসকদের জন্য সংকেত ছিল যে পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন।

উডল্যান্ডস হাসপাতালের শিশুরোগের শল্য চিকিৎসক অনীক রায়চৌধুরী এই অস্ত্রোপচারটি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা অস্ত্রোপচারের সময় অ্যাপেন্ডিক্সটি সরিয়ে দিই, কারণ এটি পেটের উপরের অংশে অবস্থিত ছিল। বিশেষ পদ্ধতিতে আমরা অন্ত্রের ত্রুটি মেরামত করি। চার দিনের শিশুর জন্য অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, কিন্তু আমাদের অ্যানাস্থেটিস্ট উদয়ন বক্সী এবং শ্রেয়া লাহিড়ী সেই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন।”

অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (NICU) দশ দিন ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসক পুলক কোলে এবং সাব্যসাচী দাস তার নজরদারি করেন। চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সম্প্রতি তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

শিশুটির সুস্থতার খবরটি আশার আলো এনে দিয়েছে অনেক বাবা-মায়ের জন্য যারা সন্তান নিয়ে উদ্বেগে থাকেন। চিকিৎসকদের দক্ষতা এবং নিষ্ঠা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করে যে, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আজকের দিনে আরও উন্নত হয়েছে।

সদ্যোজাতদের স্বাস্থ্য সমস্যা একটি সাধারণ উদ্বেগ হলেও, চিকিৎসকদের সতর্কতা এবং দ্রুত পদক্ষেপের ফলে অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার সম্ভব হয়। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরও এমন সাফল্যের গল্প দেখা যাবে, যেখানে ডাক্তারদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিত হবে।

এটি শুধু এক পরিবারের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা মানুষের জীবন রক্ষায় কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

Read more

Local News