হরিয়ানায় কংগ্রেসের পরাজয়
হরিয়ানায় কংগ্রেসের পরাজয়ের ফলে রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন পরিবর্তন এসেছে, যা অন্য রাজ্যের শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির মুখোমুখি লড়াইয়ে পরাজয় হয়েছে, এবং এই পরিস্থিতি তৃণমূল শিবিরকে যথেষ্ট খুশি করেছে। তারা মনে করছে, এখন কংগ্রেসকে অন্য বিরোধী দলগুলির কথার ভিত্তিতে চলতে হবে।
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৯৯টি আসনে জয়লাভ করার পর রাহুল গান্ধী বিরোধী দলনেতা হিসেবে সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে হরিয়ানায় কংগ্রেসের হার, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন এবং উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে আগামী সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলি।
তৃণমূলের নেতৃত্ব আশা করছে, কংগ্রেসের এই পরিস্থিতি তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। কারণ, তারা লোকসভায় ২৭টি আসনে জয়ী হলেও বিরোধী জোটে তাদের প্রভাব তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। তৃণমূলের মতে, কংগ্রেসের পরাজয়ের ফলে তাদের অবস্থান এখন দুর্বল হয়েছে।
সমাজবাদী পার্টির এক নেতার মতে, কংগ্রেসের হার প্রমাণ করে যে তারা একা লড়তে পারছে না। কংগ্রেসের এই মনোভাব দেখে শরিক দলের মধ্যে সমন্বয় বাড়তে শুরু করেছে। মহারাষ্ট্রের প্রার্থী তালিকা নিয়ে কংগ্রেসের বৈঠকে রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রের নেতা বালাসাহেব থোরাটকে তোপ দেগে প্রশ্ন করেছিলেন কেন তিনি দলিত ও ওবিসি অধ্যুষিত আসনগুলি শরিকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।
শরিকদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হওয়া কংগ্রেসের জন্য বড় বিপদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কংগ্রেস বর্তমানে মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সঙ্গে আসন ভাগাভাগির দর কষাকষি করছে, কিন্তু তারা কোনও একটি দলের জন্য সমন্বয় করতে চাইছে না।
এদিকে, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য টি এস সিংহদেব দাবি করেছেন যে রাহুল গান্ধী বৈঠকে এমন কিছু বলেননি। তিনি সব দলকে প্রার্থী তালিকায় জায়গা দেওয়ার কথা বলেছিলেন এবং দলিত ও আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী প্রার্থী করে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। কিন্তু শরিক দলের নেতারা মনে করছেন, রাহুলের এই অবস্থান থেকে পরিষ্কার যে কংগ্রেস শরিকদের সহযোগিতায় নিজেদের শক্তি বাড়ানোর পর এখন শরিকদের জমি ছাড়তে চাইছে।
শুক্রবারের বৈঠকে কংগ্রেসের নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। হরিয়ানায় কংগ্রেসের পরাজয় দলটির মধ্যে দানবীয় মানসিকতার সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের মতে, যদি মহারাষ্ট্রে এমভিএ জোট হারে, তাহলে সংসদে ইন্ডিয়া জোটের প্রভাব কমে যাবে এবং বিরোধী জোটের মধ্যে কংগ্রেসের মনোবলও ধাক্কা খাবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, তারা একমাত্র শরিক যারা লোকসভায় ৪২টি আসনে একাই লড়াই করেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও তারা ২৯৪টি আসনে একাই লড়ার আশা করছেন। অর্থাৎ, কংগ্রেসের পরাজয়ের ফলে যা হবে, তাতে তৃণমূলের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসের এই পরিস্থিতির ফলে তাদের শক্তি কমবে এবং অন্য শরিক দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে। আগামী দিনে কংগ্রেসের নেতৃত্ব যদি তাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না আনে, তবে তারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরও সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।

