Thursday, January 30, 2025

ট্রাম নিয়ে আদালত রায় দিলেই ট্রাম ট্র্যাক তুলে রাস্তা সংস্কার হবে, জানালেন মেয়র ফিরহাদ

Share

ট্রাম ট্র্যাক তুলে রাস্তা সংস্কার !

কলকাতা শহর ক্রমশ গতিশীল হয়ে উঠছে, আর সেই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার কারণে রাজ্য সরকার শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে শহরের ট্রাম ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আর মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

ট্রাম ট্র্যাক তুলে রাস্তা সংস্কার

সম্প্রতি ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ একটি বৈঠকে ট্রাম ট্র্যাক তুলে রাস্তা সংস্কারের দাবি তুলেন। তিনি বলেন, “১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজাবাজার-বাবুঘাট-সহ যেসব রুটে ট্রাম চলাচল হচ্ছে না, সেখানকার ট্রাম ট্র্যাক ও তার সংলগ্ন রাস্তাগুলির অবস্থা খুব খারাপ। এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে বর্ষাকালে স্কুটার ও বাইক আরোহীরা বিপদে পড়ছেন।”

কাউন্সিলরের এই উদ্বেগের প্রেক্ষিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট করেন যে, “কলকাতা শহর দিন দিন গতিশীল হচ্ছে। আর ট্রামের মতো যানবাহন সেই তালের সঙ্গে চলতে পারছে না।” তিনি জানান, “আমরা কেবলমাত্র একটি রুটে ট্রাম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।”

আদালতের রায় অপেক্ষমাণ

মেয়র আরও বলেন, “আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হলেই কলকাতা ট্রাম কোম্পানি ট্রাম ট্র্যাক তোলার কাজ করবে। তারপরেই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করবে কলকাতা পুরসভা।” এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা অনেক মানুষের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ শহরের ট্রাম সার্ভিস বন্ধ থাকার কারণে রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

শহর কলকাতার জন্য ট্রাম একটি ঐতিহ্যবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন। তবে বর্তমানে, সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে ট্রামের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। ট্রাম সেবা নিয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের রায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি সিদ্ধান্ত এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া

রাজ্য সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত শুধু জয় রাইড হিসাবে ট্রাম চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টে চলমান মামলার ফলাফল শহরের জনজীবন ও পরিবহন ব্যবস্থার উপর বড় প্রভাব ফেলবে।

ট্রামের ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ

কলকাতা শহরের ট্রাম ব্যবস্থার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং তা শহরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। দীর্ঘদিন ধরে শহরের অনেক মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে ট্রাম। তবে বর্তমান সময়ের সাথে সাথে, শহরের যানজট এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ট্রামের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে।

মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য অনুযায়ী, “শহর ক্রমশ গতিশীল হচ্ছে এবং সেই গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হচ্ছে।” কিন্তু ট্রামের এই পরিবর্তন কি আসলেই শহরের জন্য উপকারী হবে? তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত।

ট্রামের জন্য আগামী দিনের পরিকল্পনা

ট্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও মেয়র জানিয়েছেন, একবার আদালতের রায় আসলে পুরো প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে এগোবে। ট্রাম ট্র্যাক তুললে তার স্থান পুনর্নবীকরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পর শহরের বাসিন্দাদের কাছে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। নতুন রাস্তা সংস্কারের ফলে কি সড়ক দুর্ঘটনা কমবে? ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে শহরের পরিবহন ব্যবস্থা কিভাবে প্রভাবিত হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে আদালতের রায়ের।

উপসংহার

অবশেষে, কলকাতার ট্রাম ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। শহরের বাসিন্দারা ট্রামের জন্য যে ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব অনুভব করেন, সেই অনুভূতি কি ক্ষুণ্ণ হবে? নতুন রাস্তা সংস্কারের ফলে কি ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হবে, তা এখনও অজানা। তবে, কলকাতা শহরের মধ্যে ট্রামের গুরুত্ব অস্বীকার করার মতো নয়। সামনে কি সিদ্ধান্ত আসবে, তা দেখার জন্য শহরের মানুষ উত্তেজিত।

Read more

Local News