সিপিএমের পদাঙ্কে বর্তমান তৃণমূল?
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস যেন ৪১ বছর আগের সিপিএমের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পাল্টা সংগঠন গড়ে তুলেছে। ১৯৮২ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময়েও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন দমন করতে সিপিএম এমন একটি পাল্টা সংগঠন গড়ে তুলেছিল। এবার তৃণমূলের সহযোগিতায় নতুন সংগঠন “ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন” (ডব্লিউবিজেডিএ) আত্মপ্রকাশ করেছে, যা মূলত আরজি কর হাসপাতালে চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
নতুন সংগঠনের উদ্বোধন, তৃণমূলের পরোক্ষ সমর্থন
শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ডব্লিউবিজেডিএ তাদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে। এই নতুন সংগঠনের দাবি, এটি অরাজনৈতিক হলেও তৃণমূলের সমর্থন অনেকটাই স্পষ্ট। এমনকি সাংবাদিক বৈঠকের আগে সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তৃতার ক্রম ঠিক করতেও তৃণমূলের এক মুখপাত্রকে দেখা গিয়েছিল। এই নতুন সংগঠনটির মূল লক্ষ্য, আরজি করের আন্দোলনের নামে চলা কথিত অর্থসঙ্কলন এবং থ্রেট কালচার বন্ধ করা।
কোটি কোটি টাকার তোলা এবং থ্রেট কালচারের অভিযোগ
নতুন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে নির্যাতিতার নামে চলা আন্দোলনের মাধ্যমে বিশাল অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। শ্রীশ চক্রবর্তী এবং সৌরভ দাসের মতো নেতারা জানান, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঢুকেছে, এবং নির্যাতিতার বিচার চেয়ে সংগ্রহ করা এই অর্থ নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত। ইন্টার্ন আতাউল রহমান জানান, ইডি এই অর্থের উৎস ও ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করুক। প্রসঙ্গত, আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি
আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে যে, থ্রেট কালচারে যুক্ত থাকার কারণে ৫১ জন জুনিয়র ডাক্তার ও ইন্টার্নকে কোনও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সাসপেন্ড করা হয়েছে। যদিও হাই কোর্ট এই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তবে নতুন সংগঠনের বক্তব্য, তাদের বিরুদ্ধেই আসলে থ্রেট কালচার চালানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক হাতিয়ার নাকি নৈরাজ্যের পেছনে শাসকের আশ্রয়?
আন্দোলনের মূল মুখ অনিকেত মাহাতো গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তদের অনেকেই দাগি অপরাধী। যদিও এ নিয়ে অনিকেতকে মানহানির মামলার নোটিস পাঠানো হয়েছে। নতুন সংগঠনের দাবি, আন্দোলনের নামে একটি অরাজকতা সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
তৃণমূলের কৌশল, আন্দোলন দমন নাকি পাল্টা ভাষ্য নির্মাণ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ সময়েই পাল্টা সংগঠনের আত্মপ্রকাশ তৃণমূলের নতুন একটি কৌশল। এটি একদিকে আন্দোলন দমনের পাশাপাশি অন্যদিকে সরকারের ভাষ্য নির্মাণের প্রচেষ্টা। আন্দোলনের নামে কোনো অপচেষ্টাকে রুখতে তৃণমূলের এই পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তেজনাময় করেছে।