টেট পরীক্ষার ভুল প্রশ্ন
২০২২ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় — কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি জানান কয়েকজন টেট পরীক্ষার্থী। তাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চের শুনানিতে বিচারপতিরা এই মামলার আবেদন খারিজ করে দেন। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে বলেন, “প্রশ্নভুল যাচাইয়ের জন্য গঠিত কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় কোনও অসুবিধা নেই। কেন এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে আপত্তি?” আদালত জানায়, হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী কমিটি গঠনেই বিষয়টি সমাধান হবে এবং কোনও হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। ফলে মামলাকারীদের মামলা প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।
কমিটির সিদ্ধান্তে কী হবে?
২০১৭ ও ২০২২ সালের টেট পরীক্ষার প্রশ্নভুল সংক্রান্ত মামলার মূল অভিযোগে বলা হয়, ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষায় ২৩টি এবং ২০২২ সালের টেট পরীক্ষায় ২৪টি প্রশ্নে ভুল রয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথমে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নেতৃত্বে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের প্রশ্নপত্র যাচাই করবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, এবং ২০২২ সালের প্রশ্নপত্র যাচাই করবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। তবে পরে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের নির্দেশে একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও অন্তর্ভুক্তি ঘটে, যাতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা মিলিতভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলাকারীদের প্রতিক্রিয়া
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে মামলাকারীরা এই মামলাটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানায়, “হাই কোর্টের রায়ই বহাল থাকবে, এবং তাতে কোনও পরিবর্তন আনা হবে না। যদি মামলাটি প্রত্যাহার না করা হয়, তা হলে খারিজ করা হবে।” এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মামলাকারীরা তাঁদের আবেদন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই একই বিষয় নিয়ে আরও প্রায় ২০০ জন পরীক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। তাদের ক্ষেত্রেও শীর্ষ আদালত একই মনোভাব পোষণ করেছে। তাঁরা যদি মামলাটি চালিয়ে যেতে চান, তবে সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে।
উপসংহার
এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশ্নভুল সংশোধনে বিচার বিভাগের নির্ধারিত পন্থা এবং দায়িত্বশীল মনোভাব বজায় রাখতে শীর্ষ আদালত উদ্যোগী। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটিই প্রশ্নভুলের নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করবে।

