দানা আগমন
মৌসম ভবন সম্প্রতি জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উত্তরে নতুন একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এই নিম্নচাপটি আগামী বুধবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এই পরিবর্তনটি ঘটতে চলেছে এবং এর নামকরণ হবে ‘দানা’। কিন্তু কেন এই নাম? এর পেছনের অর্থ কী?
নতুন খবর অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে, তা সোমবার ভোরে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, আগামী বুধবার এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এরপর এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘দানা’ নামটি কাতারের দেওয়া। আরবি ভাষায় ‘দানা’ শব্দের অর্থ ‘সুন্দর এবং মূল্যবান মুক্তো’। আবার হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, এর আরেকটি অর্থ হলো ‘উদারতা’ বা ‘দান’। এই নামকরণের পেছনে একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যেখানে আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যাগুলির নামকরণের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া দফতর।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের জন্য আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। ২০২০ সালে ভারতের মৌসম ভবন ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় ‘দানা’ নামটি রয়েছে। এখন পর্যন্ত, নামটি ঘোষণা করা হয়নি; তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এটি স্বীকৃত হবে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো আবহাওয়া দেখা দিতে পারে। সেখানে বাতাসের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। যদি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তবে এটি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এমনকি কোথাও কোথাও বাতাসের গতি ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে ‘দানা’র আগমনের সাথে সাথে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা ও মৎস্যজীবীদের জন্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে। ফলে হাওয়া অফিস মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে। ইতিমধ্যে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ২০ থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো আবহাওয়া থাকতে পারে।
এছাড়া, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলেও আবহাওয়ার তেমন পরিবর্তন হতে পারে। আগামী বুধবার দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে।
‘দানা’র আগমন ঘূর্ণিঝড়ের আকারে গ্রহণ করে বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি আরও উত্তাল করতে পারে। বিশেষ করে আমাদের প্রস্তুতির উপর নির্ভর করছে এর সম্ভাব্য ক্ষতি। তাই আমাদের সকলের উচিত সতর্ক থাকা এবং সরকারী নির্দেশনা মেনে চলা।