শিক্ষকদের স্বাস্থ্যসেবা
পশ্চিমবঙ্গে সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিয়ে বিরাট বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা রাজ্যের স্বাস্থ্য স্কিমের আওতায় থাকলেও, সরকার পোষিত শিক্ষকদের এখনও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই বিষয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ বেড়ে চলেছে এবং তারা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন।
বর্তমানে, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকরা মাসে মাত্র ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। যদি কেউ এই ৫০০ টাকা না নেন, তাহলে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় তাঁরা যেতে পারবেন। অথচ, সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা এই ৫০০ টাকা ছেড়ে দিলেও ১০ লক্ষ টাকার সরকারি স্বাস্থ্য স্কিমের সুবিধা পান। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, “এটি স্পষ্টভাবে বৈষম্য। কেন আমাদের এমন সীমাবদ্ধতায় আটকে থাকতে হবে?”
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকার বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প মূলত রাজ্যের অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মচারীদের জন্য ছিল, তবে পরবর্তী সময়ে সরকার পোষিত শিক্ষকদের জন্যও এই সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের জন্য ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য স্কিম চালু করা হয়। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।”
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীলকান্ত ঘোষ অভিযোগ করেন, “বহু শিক্ষক চিকিৎসার জন্য ভিন রাজ্যে যেতে চান, কিন্তু স্বাস্থ্যসাথীর অধীনে সেখানে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিছু হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী গ্রহণ করতেও চায় না। আমাদের অবিলম্বে সরকারি স্বাস্থ্য স্কিমের আওতাভুক্ত করা হোক।”
শিক্ষা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা সরকারি কর্মী নন এবং তাঁদের নিয়োগ পদ্ধতি আলাদা। তবে তাঁরা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। সরকারি স্বাস্থ্য স্কিমে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এখনও ভাবনা চলছে।” কিন্তু শিক্ষকদের প্রশ্ন, “সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসাথী পেতে তো ৫০০ টাকা দিতে হয় না। অথচ আমাদের তা দিতে হচ্ছে, কেন?”
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা সরকারের কাছে সুস্পষ্ট দাবি তুলছেন, যাতে তারা স্বাস্থ্যসেবার সমান সুযোগ পান এবং বৈষম্যের অবসান ঘটে। সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তাদের দাবি মেনে নেওয়া।

