ফরাক্কায় গণপিটুনিতে মৃত্যু
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় চুরির অভিযোগে ২৭ বছর বয়সী যুবক করিম শেখের মৃত্যুর ঘটনা আবারও গণপিটুনির অন্ধকার দিকটি সামনে এনে দিয়েছে। ফরাক্কা ব্লকের মহাদেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য মহাদেবনগর এলাকায় বাস করতেন করিম। পেশায় দিনমজুর এই যুবককে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার ভোর ৪টার দিকে গোপালনগরের একটি বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে করিমকে হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। এলাকাবাসী গত কিছুদিন ধরেই চুরির ঘটনার জন্য আতঙ্কিত ছিলেন। গোপন সূত্রে খবর, অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয়রা করিমকে ধরার পর বেধড়ক মারধর করেন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে করিমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের পরিবার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, করিমের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ মিথ্যা। তাঁর আত্মীয় জব্বর শেখ বলেছেন, “আমার ভাইপো কখনও চুরি করতে পারে না। যদি সত্যিই কিছু ঘটে থাকে, তার জন্য আইন আছে। বিনা বিচারে কাউকে এভাবে পিটিয়ে মারা উচিত নয়। আমরা চাই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।”

এদিকে, মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার আনন্দ রায় জানিয়েছেন, ঘটনার কথা শুনে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
অপরাধের অভিযোগে বিচার করার পরিবর্তে এ ধরনের গণপিটুনি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা সমাজের মধ্যে ভয় এবং অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। আইনজীবীরা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই ধরনের আইনহীনতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, যাতে অপরাধের বিচার আইনের মাধ্যমে হয়, এবং কোনও নিরপরাধ ব্যক্তির জীবনকে এরকম অমানবিকভাবে কেড়ে নেওয়া না হয়।
ফরাক্কায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সমাজের জন্য একটি বড় চিন্তার বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে অপরাধের মোকাবিলা করা, পাশাপাশি মানুষকে আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে উদ্বুদ্ধ করা।

