মন্ত্রী সুজিত বসুর গাড়িতে হামলা
রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু সম্প্রতি ধর্মতলায় ঘটে যাওয়া এক ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন, যখন তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধনের সময় তাঁর গাড়িতে আসছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে লরি ফিরে আসার পথে এই ঘটনাটি ঘটে। ধর্মতলায় তখন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ডাক অনুযায়ী মানববন্ধন চলছিল, এবং যখন সুজিতের গাড়িটি উপস্থিত হয়, তখন সেখানে উপস্থিত জনতা তাঁর দিকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে।
আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ
জুনিয়র ডাক্তারদের মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা সুজিতকে গাড়িতে দেখেই চিৎকার করে ওঠে। আন্দোলনকারীরা একত্রে গাড়ির দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। সুজিতের অভিযোগ, এ সময় তাঁর গাড়িতে বোতলও ছোঁড়া হয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুতই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং ধর্মতলা মোড়ের চারপাশে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে সুজিতের গাড়ি থামেনি এবং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। চলন্ত গাড়ির পিছনের দিকে কেউ কেউ চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে।

মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরে সুজিত বসু বলেন, “গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু এটি কী ধরনের অসভ্যতা! গাড়িতে আক্রমণ করা হবে?” তিনি আরও যোগ করেন, “ওদের চেয়ে আমাদের পুজোর লোক অনেক বেশি ছিল। সেখানে যদি পাল্টা হত, তাহলে কি ভালো হত? আমি চাইনি পুজোর মধ্যে ঘটনাটা বাড়তে দিতে।” সুজিতের গাড়ি চলে যাওয়ার পর, আন্দোলনকারীরা কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছান এবং তাঁর চারপাশে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানেও ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
এদিকে আন্দোলনকারীদের পাল্টা অভিযোগ রয়েছে, সুজিতের গাড়িটি মানববন্ধনের সময় উপস্থিত মানুষদের প্রায় ঘাড়ের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। একজন আন্দোলনকারী, নবনীতা দাস, বলেন, “মন্ত্রী বলে কি মানুষকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে দেবেন! তাঁর গাড়ি যে ভাবে গিয়েছে, তাতে এক সুতোর এ দিক-ও দিক হলেই আমার পা পিষে যেত।”
প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
এটি স্পষ্ট যে, এই ঘটনার মধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ উগড়ে পড়েছে। একদিকে যেখানে দ্রোহের কার্নিভাল চলছিল, অন্যদিকে ধর্মতলায় মানববন্ধন। ফলে, মঙ্গলবার ধর্মতলা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, এবং সেখানে মানুষজনের ঢল জমে যায়।
এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ এবং অসন্তোষের চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে গত কিছু দিন ধরে একাধিক আন্দোলন দেখা গেছে, যা সরকারের বিভিন্ন নীতি ও কাজের প্রতি মানুষের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

উপসংহার
সুজিত বসুর গাড়িতে আক্রমণ এবং ডিসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের এই ঘটনাটি শুধু এক ইভেন্ট নয়, বরং সরকারের বিরুদ্ধে জনমত ও জনদাবির চিত্র তুলে ধরে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ও মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের সমাজে গণতান্ত্রিক আন্দোলন কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের উচিত জনগণের অনুভূতি ও তাদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে সদা সজাগ থাকা।
যদি প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা জনগণের দাবি-দাওয়া গুরুত্বের সঙ্গে নেন, তাহলে ভবিষ্যতে এমন উত্তেজনার সৃষ্টি হবে না। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত, নিজেদের কর্মকাণ্ড ও নীতির প্রতি জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জন করা এবং সেই বিশ্বাস রক্ষার জন্য কাজ করা।

