সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ
সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকার এখন সুপ্রিম কোর্টের নজরে এসেছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সম্প্রতি সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের প্রক্রিয়া, তাদের যোগ্যতা, নিয়োগের পদ্ধতি, ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্যের কাছে ছয়টি প্রশ্ন রেখেছেন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রাজ্যকে হলফনামা আকারে আগামী শুনানিতে উপস্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি, স্কুল, হাসপাতাল এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।
প্রধান প্রশ্নসমূহ
সুপ্রিম কোর্টের এই ছয়টি প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে:
- সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ কে করে?
- কোন আইনের অধীনে তাদের নিয়োগ করা হয়?
- তাদের নিয়োগের জন্য কোন কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?
- নিয়োগের আগে তাদের তথ্য যাচাই কিভাবে করা হয়?
- বর্তমানে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছে?
- সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতন এবং বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি কীভাবে পরিচালিত হয়?
প্রধান বিচারপতি পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দেন, রাজ্যকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হলফনামা আকারে দিতে হবে এবং পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের পদ্ধতির সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে।
‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্প
মঙ্গলবারের শুনানিতে আইনজীবী করুণা নন্দী জানান, রাজ্য সরকারের ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পের আওতায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাতের বেলায় শহরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু একটি সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম অভিযুক্ত হিসেবে ওঠে এসেছে একটি ধর্ষণ ও হত্যার মামলায়, যা রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
করুণা উল্লেখ করেন যে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাখা যাবে না। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে আদালত প্রশ্ন করে, “এটা কিভাবে সম্ভব হলো যে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োগ করা হচ্ছে?”
নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা
রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা নিশ্চিত করবে স্কুল, হাসপাতাল এবং থানার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হবে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, “এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ হলে তা সমাজের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”
সিবিআইয়ের স্টেটাস রিপোর্ট
এই শুনানির প্রেক্ষিতে সিবিআই তাদের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে চার্জশিটের কথাও উল্লেখ রয়েছে এবং এর কপি সুপ্রিম কোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে। সিবিআই জানায়, মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর কেউ জড়িত কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে।
রাজ্যের দায়িত্ব
এখন রাজ্যের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই চ্যালেঞ্জিং। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে যথাযথভাবে হলফনামা প্রস্তুত করতে হবে এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের পদ্ধতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের কার্যক্রম ও ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে, যাতে জনমানসে কোনও রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।
উপসংহার
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনা সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাজ্য সরকারের উচিত এই নির্দেশনার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ রক্ষা করা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারকে জনসুরক্ষা এবং নিরাপত্তার উপর বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনও ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।