🧬 “আফ্রিকার রক্ত ইংরেজদের শিরায়”— জিন বিশ্লেষণে বদলে গেল ইংল্যান্ডের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস!

আফ্রিকার রক্ত ইংরেজদের শিরায়!

ইংরেজদের উৎপত্তি নিয়ে এতদিন যে ধারণা ছিল, তা হয়তো নতুন গবেষণার পর পাল্টে যাবে। ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়-এর নেতৃত্বে এক আন্তর্জাতিক দল সাম্প্রতিক জিন-পরীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন— ইংল্যান্ডের কিছু মানুষের পূর্বপুরুষ পশ্চিম আফ্রিকা থেকেও এসেছিলেন!
এই আবিষ্কার যেন ইংরেজ সমাজের আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতেই ধাক্কা দিয়েছে।

⚱️ দুই কঙ্কাল, এক যুগান্তকারী আবিষ্কার

ইংল্যান্ডের কেন্ট এবং ডরসেট অঞ্চলে দুটি প্রাচীন সমাধি থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের জিন বিশ্লেষণ করেই এই চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ পায়।
একটি কঙ্কাল কেন্টের আপডাউন অঞ্চলের— প্রায় ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীর।
অন্যটি ডরসেটের ওয়ার্থ মাট্রাভার্স এলাকার— এক যুবকের।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই দুই ব্যক্তির সমাধি হয়েছিল সপ্তদশ শতকে, অর্থাৎ অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের সূচনাকালেই, যখন রোমান সাম্রাজ্য ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে এবং ব্রিটেনে নতুন সভ্যতার বীজ বপন শুরু হয়েছে।

🧫 ডিএনএ পরীক্ষা কী বলল?

গবেষণার ফল বলছে, এই দুই কঙ্কালের জিনে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিএনএ এসেছে পশ্চিম আফ্রিকার সাহারা-অঞ্চলের জনগোষ্ঠী থেকে।
ল্যাঙ্কাশায়ারের বিজ্ঞানী ডানকান সেয়ার-এর ভাষায়,

“এই দুই কঙ্কাল যাঁদের, তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন মিশ্র বংশোদ্ভূত— এক অংশ আফ্রিকান, এক অংশ ইউরোপীয়।”

অর্থাৎ, ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এসে ইংল্যান্ডে বসতি গড়ার আগেই আফ্রিকার মানুষের উপস্থিতি ছিল ব্রিটিশ মাটিতে।
এই দাবি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সেই প্রচলিত ধারণাকে— যে ইংরেজদের বংশধারা একান্তভাবে অ্যাংলো স্যাক্সন, কেল্টিক বা জার্মানিক উপজাতি থেকেই এসেছে।

🌍 আফ্রিকা-ইংল্যান্ড: সংস্কৃতি ও রক্তের আদানপ্রদান

বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু জিন নয়, সংস্কৃতির প্রমাণও মিলেছে।
কেন্টের সেই কিশোরীর সমাধিস্থলে পাওয়া গেছে একটি অলঙ্কৃত মাটির পাত্র, যা আফ্রিকান শিল্পশৈলীর সঙ্গে একেবারে মিলে যায়।
অন্য সমাধি থেকেও উদ্ধার হয়েছে কিছু অলংকার ও মৃৎপাত্র, যেগুলির কারিগরি নিদর্শন মেলে পশ্চিম আফ্রিকার ইয়োরুবা ও মান্ডেকা সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি সামগ্রীর সঙ্গে।

এ থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যযুগেই আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ শুরু হয়েছিল— অনেক আগেই, উপনিবেশ স্থাপনের যুগের বহু পূর্বে।

🧬 “ব্রিটেন কখনওই ছিল না একজাতি সমাজ”— বলছেন বিজ্ঞানীরা

জার্মান বিজ্ঞানী জশচা গ্রেটজ়িঙ্গার বলেন,

“কেন্টের কিশোরীর পূর্বপুরুষ আফ্রিকান না হলেও, তাঁর পরিবারের কেউ একজন হয়তো আফ্রিকার মানুষকে বিয়ে করেছিলেন। সেই সূত্রেই আফ্রিকান জিন প্রবেশ করেছে ব্রিটিশ সমাজে।”

তিনি আরও জানান, বাইজ়ান্টাইন সাম্রাজ্য যখন ষষ্ঠ শতকে উত্তর আফ্রিকা দখল করে, তখন সেখান থেকে ইউরোপের নানা প্রান্তে অভিবাসন শুরু হয়। সেই ঢেউয়ের একটি অংশ এসে পৌঁছেছিল ব্রিটেনে— আর তাঁদের উত্তরসূরিই এই দুই কঙ্কাল।

🧩 প্রচলিত ইতিহাসে প্রশ্নচিহ্ন

দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাসবিদেরা মনে করতেন, মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের মানুষ ছিলেন “সমজাতি” বা হোমোজিনাস— অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে জাতিগত মিশ্রণ ঘটেনি।
নতুন গবেষণা বলছে, বাস্তবে সেই সময়ের ব্রিটেন ছিল এক “মেল্টিং পট”, যেখানে আফ্রিকান, ইউরোপীয়, এমনকি এশীয় বংশধারার সংমিশ্রণ ঘটেছিল।

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য,

“ইংল্যান্ডের ইতিহাস শুধু যুদ্ধ বা উপনিবেশ নয়, এটি ছিল অভিবাসন, মেলবন্ধন ও জিনের যাত্রার ইতিহাস।”

🏁 শেষকথা: ইংল্যান্ডের বুকে আফ্রিকার প্রতিধ্বনি

এই আবিষ্কার প্রমাণ করছে— ইংরেজ জাতির শিকড়ে কেবল ইউরোপ নয়, আফ্রিকারও অবিচ্ছেদ্য উপস্থিতি রয়েছে।
অতএব, ‘ব্রিটিশ’ পরিচয়ের ভেতরেও লুকিয়ে আছে এক গভীর, বৈচিত্র্যময় বৈশ্বিক উত্তরাধিকার।