🥛 “কফি-চকোলেটে প্রোটিনের ছোঁয়া! শরীরের উপকার না অপকার?”

কফি-চকোলেটে প্রোটিনের ছোঁয়া!

আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে প্রোটিন নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা চোখে পড়ছে। ‘ফিট’ থাকতে চাইলে প্রোটিন খেতে হবে—এটাই যেন অলিখিত নিয়ম! আর এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে বাজার ভরে গেছে নানা ‘প্রোটিন-ফুড’ দিয়ে—কফি, ইয়োগার্ট, চকলেট, এমনকি আইসক্রিমেও মেশানো হচ্ছে বাড়তি প্রোটিন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সত্যিই কি এগুলো খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে? আদৌ কি লাভ হচ্ছে?

প্রোটিন নিঃসন্দেহে আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। পেশি গঠনে, কোষ মেরামতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে—সব কিছুতেই প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেকেই ভেবে বসেন, যত বেশি প্রোটিন খাব, ততই ভাল। আর এই ভ্রান্ত ধারণার ফাঁদেই পড়ছেন বহু মানুষ।

বর্তমানে এমন অনেক প্যাকেটজাত খাবার বাজারে এসেছে, যেখানে ‘হাই প্রোটিন’ ট্যাগ লেগে রয়েছে। সেই খাবারে শর্করা, ফ্যাট কম—সেই সঙ্গে বাড়তি প্রোটিন। শুনতে আকর্ষণীয় হলেও, এর সবটাই যে উপকারী, তা কিন্তু নয়।

পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, “একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুযায়ী ওজন অনুযায়ী ০.৮ গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১.৩-১.৬ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন খেলেই যে বেশি উপকার হবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়।”

প্রোটিনের অভাব যেমন ক্ষতিকর, তেমনি অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার ফলেও শরীরে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে, হজমে সমস্যা হতে পারে, এমনকি অন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণগুলিও বাদ পড়ে যেতে পারে।

তাহলে উপায় কী?

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ও টাটকা খাবার খাওয়াই শ্রেয়। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, ছোলা, সয়াবিন, দুধ, পনির, টোফু, বাদাম—এসবেই রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রোটিন মেশানো হলেও, তাতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল কমে যায় কিংবা বাদ পড়ে। এমনকি প্রোটিন মেশাতে গিয়ে অনেক সময় কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার হয়, যা শরীরের জন্য একেবারেই উপকারী নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চকলেট বা কেক খেয়ে যদি কেউ মনে করেন, ‘আজকের প্রোটিন কোটা পূর্ণ’—তবে সেটা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছু নয়। এই ধরনের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ কম, আর প্রক্রিয়াজাত হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যকর উপাদান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।

সুতরাং, প্রোটিন খেতে হবে ঠিকই, কিন্তু সেটি যেন হয় সঠিক উৎস থেকে। ফিটনেস ট্রেন্ড বা সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনায় ভেসে গিয়ে প্রতিদিনের পুষ্টি ভুলে গেলে চলবে না। শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে সুষম খাদ্যই সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

শেষ কথা, চা-কফিতে প্রোটিনের গ্ল্যামার যতই থাকুক না কেন, শরীর ভালো রাখতে সেরা উপায় এখনও সেই পুরনো স্বাস্থ্যকর খাবারগুলিই—যা আমরা চিরকাল খেয়ে এসেছি।

স্ট্রেস কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে মাসাজ, তবে সাবধানে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত