🔻 সীমান্তে ‘মানবাকৃতি যন্ত্রগুপ্তচর’? ভাইরাল ভিডিয়োয় নতুন উদ্বেগ, এলএসি-তে ড্রাগনের নয়া চাল কি রোবট নজরদারি?

সীমান্তে ‘মানবাকৃতি যন্ত্রগুপ্তচর’?

ভারত-চিন সীমান্তে আবারও উত্তেজনার সুর। এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে রক্তমাংসের মানুষের মতো চালচলনসম্পন্ন এক মানবাকৃতি রোবট! সামাজিক মাধ্যম জুড়ে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিয়ো ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে—চিন কি তবে ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা’ বা এলএসি-র কাছে ভারতীয় সেনার গতিবিধি বোঝার জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে রোবট মোতায়েন করেছে? যদিও নয়াদিল্লির তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবুও সামরিক বিশেষজ্ঞ মহলে আলোড়ন কম নয়।

রহস্যময় ভিডিয়ো, প্রশ্নের পর প্রশ্ন

২ ডিসেম্বর ‘এক্স’-এ পোস্ট হওয়া ৩৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি দাবি করে—এটি ভারত-চিন সীমান্তে নজরদারি চলাকালীন তোলা। ভিডিওতে দেখা যায় সাদা পোশাক পরা একটি মানবাকৃতি রোবট দুর্গম পাহাড়ের মাঝে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ভিডিয়োয় হিন্দি ভাষায় কথোপকথনের শব্দ শোনা গেলেও তা রোবটের কি না তা স্পষ্ট নয়। কোথায় বা কবে ভিডিওটি তোলা হয়েছে—সেটিও অজানা। ফলে ভিডিওটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও, সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে।

অনেকে এটিকে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরি কোনও চলচ্চিত্রের দৃশ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকের দাবি—এটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি ডিপ-ফেক। তবে এমনও অনেকে আছেন যারা মনে করছেন, রুটিন পেট্রোলের সময় ভারতীয় সেনাই প্রথম রোবটটির দেখা পেয়েছেন। বিতর্কের কোনও সঠিক জবাব এখনও পাওয়া যায়নি।

চিন কি সত্যিই প্রস্তুত? প্রযুক্তির দৌড়ে নতুন হুমকি

চিনা সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি দাবি করেছে—সাংহাইয়ের রোবট নির্মাতা সংস্থা ‘অ্যাজিবট’ একটি মানবাকৃতি রোবট ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ বিরামহীন হাঁটিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ‘অ্যাজিবট এ–২’ নামের সেই যন্ত্রটির উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং ওজন মাত্র ৫৫ কিলো। এতে রয়েছে উন্নত এআই সিস্টেম, জিপিএস, ইনফ্রারেড ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত লিথিয়াম–আয়ন ব্যাটারি। এই রোবটকে ভবিষ্যতে সীমান্ত রক্ষার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

চিন এর আগেও সামরিক কুচকাওয়াজে রোবট-কুকুর প্রদর্শন করেছে, যেগুলি অস্ত্র বহনও করতে পারে। ফলে রোবট সৈনিক মোতায়েন করা তাদের পক্ষে খুব অস্বাভাবিক নয়।

ভারতের অবস্থান—সতর্ক থাকতেই হবে

যদিও ভারতও রোবট প্রযুক্তিতে নিয়মিত উন্নয়ন করছে—ইসরোর ‘যন্ত্রমানবী’ থেকে শুরু করে সেনার ব্যবহারের উপযোগী রোবট–ডগ—সবই তার প্রমাণ। তবে এআই প্রযুক্তিতে চিন যেহেতু এগিয়ে, তাই সীমান্তে ড্রাগনের সম্ভাব্য নতুন নজরদারি মডেল নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতের সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। সীমান্তে এই ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্য যদি সত্যিই গুপ্তচরবৃত্তি হয়, তাহলে এলএসি–তে সুরক্ষা আরও কড়া করা ছাড়া উপায় নেই।

গালওয়ানের ছায়া এখনও আছে

২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দমে দমেও সক্রিয় রয়েছে। সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, আটক ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি অসহযোগিতা—সবই সম্পর্কের ভঙ্গুরতা স্পষ্ট করে।

শেষ কথা

মানুষের মতো দেখতে রোবট সত্যিই কি চিন সীমান্তে মোতায়েন করেছে? নাকি এটি নিছক একটি গুজব? সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে প্রযুক্তির এই নতুন দৌড় সীমান্ত নিরাপত্তাকে যে আরও জটিল করে তুলেছে—তা বলাই যায়।

চিনের সামরিক উদ্ভাবন যখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে, তখন ভারতের প্রস্তুতি কেমন—এ মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।