🔶 স্কুলপথে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি: মানিকতলায় লরির ধাক্কায় গুরুতর জখম স্কুলছাত্র

স্কুলপথে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি!

কলকাতার রাস্তায় আবারও ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বুধবার সকালেই স্কুলে যাওয়ার পথে বাবার সঙ্গে বাইকে চেপে বেরিয়েছিল মাত্র বারো বছরের এক কিশোর। গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই মানিকতলার বেঙ্গল কেমিক্যাল মোড়ে ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা—এক বেপরোয়া লরি ধাক্কা মারে তাঁদের বাইকে। ছিটকে পড়ে আহত কিশোরের উপর দিয়ে উঠে যায় লরির চাকা! মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।

সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। প্রতিদিনের মতো বাবা ছেলেকে নিয়ে বাইকে করে স্কুলে যাচ্ছিলেন। ব্যস্ত মোড়ে গাড়ির সারি থাকলেও আচমকা দ্রুতগতিতে পিছন দিক থেকে উঠে আসে একটি লরি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, লরিটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে, সামান্য নিয়ন্ত্রণ হারাতেই বাইকের পেছনে জোরে ধাক্কা মারে। ধাক্কার প্রভাবে ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যায় কিশোরটি। কিন্তু দুঃস্বপ্ন তখনো বাকি—অভিযোগ, ধাক্কা মারার পরও লরিটি থামেনি, বরং আরও এগোতে চেয়েছিল। আর তাতেই চাকার নীচে পিষে যায় অসহায় ছাত্রটি।

স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার শুনে দৌড়ে আসেন এবং কয়েক মিটার দূরে গিয়ে লরিটিকে আটকে ফেলেন। তারপরই উত্তেজনা চরমে ওঠে। বহু মানুষ রাস্তায় নেমে লরিচালকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। পরে জনতার হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় ফুলবাগান থানার পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মীরা।

গুরুতর জখম অবস্থায় কিশোরটিকে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তার মাথা ও পায়ে গুরুতর আঘাত লেগেছে। সে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ছাত্র বলে জানা গিয়েছে। বাবা সামান্য আহত হলেও ছেলের এই অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “লরিটা দৌড়চ্ছিল বেপরোয়া গতিতে। ব্রেক করার আগেই ধাক্কা লেগে গেল। বাইক পড়ে যেতেই চালক আরও সামনে এগিয়ে যায়—ওটা যদি বন্ধ করত, এতটা ভয়াবহ হত না।”

কলকাতায় পথদুর্ঘটনা এখন প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়াদের মৃত্যুর সংবাদ শহরবাসীকে বারবার নাড়া দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে সল্টলেক, বাঁশদ্রোণী, বেহালা—এলাকায় একাধিক ছাত্রছাত্রী দুর্ঘটনার বলি হয়েছে। ২০২৩ সালে আয়ুষ পাইক নামে এক ছাত্র বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারায়। একই বছরে বাঁশদ্রোণীতে জেসিবি-র ধাক্কায় মারা যায় নবম শ্রেণির আরেক ছাত্র। তার আগের বছর বেহালায় লরির তলায় পড়ে মৃত্যু হয় দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশুর।

অভিভাবকদের অভিযোগ, শহরের রাস্তায় ভারী গাড়ির বেপরোয়া গতি, নিয়ম না মানা এবং ট্রাফিক নজরদারির ঘাটতিই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। স্কুলপথে নিরাপত্তা বাড়ানো, ভারী গাড়ির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা এবং কঠোর আইন প্রয়োগই এখন জরুরি বলে মনে করছেন সকলে।

এই ঘটনায় লরিচালকের বিরুদ্ধে পুলিশ ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে তারা। আহত ছাত্রের দ্রুত আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা করছেন স্থানীয়রা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ।