🔶 দিল্লি–ঢাকা নিরাপত্তা আলোচনায় নতুন বার্তা: ডোভাল–খলিলুর বৈঠকে কূটনৈতিক গুরুত্ব বাড়ল হঠাৎ

দিল্লি–ঢাকা নিরাপত্তা আলোচনায় নতুন বার্তা!

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বহু দশক ধরে নানা উত্থান–পতনের সাক্ষী। সীমান্ত নিরাপত্তা, জঙ্গিবিরোধী অভিযান, জলবণ্টন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রশ্ন—দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন নানা বিষয় রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে, দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের হঠাৎ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার মাত্র দু’দিন পর এবং ঠিক তার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণ অনুরোধ পাঠানোর পরে।

দিল্লিতে আগেভাগেই পৌঁছে বৈঠকে বসলেন খলিলুর

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (CSC) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা–স্তরের বৈঠক শুরু হবে বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ এই বার বৈঠকের চেয়ারম্যান। সেজন্যই ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর খলিলুর রহমান দিল্লি আসার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু সফরসূচি খানিক বদলে তিনি মঙ্গলবার রাতেই পৌঁছে যান। এর পরের দিন সন্ধ্যায় ডোভালের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় হায়দরাবাদ হাউসে।

এত দ্রুত সফরসূচি পরিবর্তন এবং বৈঠক ঘিরে কূটনৈতিক মহলে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার পরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সমন্বয় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

হাসিনাকে ‘প্রত্যর্পণ’ প্রশ্ন—বৈঠকে কি উঠেছে?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যেই ভারতকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে চায় ঢাকার সরকার। গত বছরের অগস্টে ছাত্রবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির সাজা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

যদিও ডোভাল–খলিল বৈঠকের সরকারি বিবৃতিতে কোনও আলোচ্যসূচির উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের মতে এই প্রসঙ্গ এড়ানো সম্ভব নয়। সীমান্ত নিরাপত্তা, জঙ্গিবিরোধী অভিযান, গোয়েন্দা–তথ্য বিনিময়—এসবের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অবশ্যই আলোচনার অংশ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ—ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তার নতুন অক্ষ

CSC মূলত ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস এবং বাংলাদেশের যৌথ নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্র–দস্যুতা, সাইবার হুমকি, সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে সমন্বয়ের জন্য এই মঞ্চ গঠিত হয়। এ বছরের বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশি NSA খলিলুর রহমান।

ভারত বরাবরই CSC–কে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চায়। সেই কারণেই ডোভাল খলিলুরকে অক্টোবরেই আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলেন।

সম্পর্কে নতুন অধ্যায়?

বাংলাদেশে গত ৫ অগস্ট ক্ষমতাচ্যুতি–পরবর্তী উত্তেজনার পরে এটি হল দু’দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। এটিকে কূটনৈতিক মহলের একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তে বেড়ে চলা অনুপ্রবেশ, জঙ্গি সংগঠনের পুনরুত্থানের চেষ্টা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে ভারত এই মুহূর্তে ঢাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী।

সমাপ্তি

যদিও সরকারি ভাবে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি, তবে ডোভাল–খলিলুর বৈঠক স্পষ্ট করল—ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। আগামী দিনে CSC বৈঠক এবং শেখ হাসিনা–বিষয়ক রাজনৈতিক সমীকরণ—দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে, সেটা দেখার অপেক্ষা এখন শুধু সময়ের।