🔴 মঙ্গলের লাল মাটিতে ‘অতিথি পাথর’! নাসার রোভার হোঁচট খেল রহস্যময় ভিন্‌গ্রহী শিলাখণ্ডে

মঙ্গলের লাল মাটিতে ‘অতিথি পাথর’!!

মঙ্গলের বুকে নতুন রহস্যের সন্ধান পেল নাসার পারসিভারেন্স রোভার। প্রায় চার বছর ধরে লাল গ্রহের জেজ়িরো ক্রেটারে ঘুরে বেড়ানো এই যান্ত্রিক অনুসন্ধানী প্রতিটি পাথরকে খুঁটিয়ে দেখছে, তুলছে তার রাসায়নিক ছবি। সম্প্রতি সেই রোভারই আবিষ্কার করল এমন এক পাথর, যা বিজ্ঞানীদের মাথায় প্রশ্নের ঝড় তুলেছে— কারণ ওই পাথরের গঠন মঙ্গলে জন্মানো কোনও বস্তু বলে মনে হচ্ছে না।

পারসিভারেন্সের পাঠানো ক্যামেরা-দৃশ্যে ধরা পড়েছে প্রায় ৩১ ইঞ্চি চওড়া এক অদ্ভুত শিলাখণ্ড। নাসার বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ফিপসাকস্লা’। জেজ়িরো ক্রেটারের ভারনোডেন নামের অঞ্চলে এটি দেখা যায়। রোভার দুটি ভিন্ন দূরত্ব থেকে এর ছবি পাঠিয়েছে— একটিতে পাথরটি উপলব্ধি করা যায় খুব কাছ থেকে, অন্যটিতে তার চারপাশের পরিবেশসহ।

বিজ্ঞানীদের বিস্ময়ের কারণ, এই পাথরের রাসায়নিক গঠন মঙ্গলের স্বাভাবিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। ফিপসাকস্লা-তে রয়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায় লোহা এবং নিকেল— যা লাল গ্রহে থাকা পাথরের মধ্যে সাধারণত এত উচ্চ পরিমাণে থাকে না। ফলে প্রাথমিক ধারণা, এটি মঙ্গলের জন্মসূত্রে নয়। বরং কোনও একসময় মহাকাশের গভীর থেকে এসে এখানে আছড়ে পড়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এটি সম্ভবত একটি বৃহৎ ধাতব উল্কাপিণ্ড, যার উৎস কোনও বৃহৎ গ্রহাণুর কেন্দ্রস্থল। সাধারণত এমন উল্কাখণ্ড তৈরি হয় সেইসব গ্রহাণুর অভ্যন্তর থেকে, যেগুলি কোটি কোটি বছর আগে ভেঙে গিয়েছিল মহাজাগতিক সংঘর্ষে। তার টুকরো পরবর্তীতে সৌরজগত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু গ্রহের গায়ে আছড়ে পড়ে।

যদি সত্যিই এটি একটি গ্রহাণুর টুকরো হয়, তবে এটি শুধু মঙ্গল নয়, পুরো সৌরজগতের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করতে পারে। তবে রোভার শুধু এর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে পারে— নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠানোর উপায় তার নেই। ফলে পূর্ণাঙ্গ গবেষণার জন্য পৃথিবীতে আনার প্রয়োজন হলেও তা নাসার ভবিষ্যৎ মিশনের উপর নির্ভর করছে। বর্তমানে নাসা এ ধরনের কোনও নমুনা-ফেরানোর মিশন শুরু করেনি।

অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, যদি ফিপসাকস্লাকে পৃথিবীতে এনে পরীক্ষা করা যেত, তবে এর বয়স, উৎস, কীভাবে এটি মঙ্গলে পৌঁছাল— সবই জানা সম্ভব হত। একই সঙ্গে জানা যেত মঙ্গলে অতীতে কত বড় উল্কাপতন ঘটেছে, কিংবা সেই আঘাতে গ্রহটির ভূপৃষ্ঠে কোনও পরিবর্তন ঘটেছিল কি না।

এই আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা জন্মেছে। মঙ্গল গ্রহে অতীতে জল থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, মিলেছে প্রাচীন নদীর চিহ্নও। এখন যদি প্রমাণ মেলে যে ভিন্‌গ্রহী পাথর সেখানে এসে পড়েছিল, তবে তা মঙ্গলের অতীত পরিবেশ সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান দেবে।

পারসিভারেন্স এখনও সেই জায়গা ঘুরে ঘুরে আরও তথ্য সংগ্রহ করছে। হয়তো সামনে আরও অজানা তথ্য উঠে আসবে— যা আমাদের সৌরজগতের ইতিহাসকে নতুন চোখে দেখতে সাহায্য করবে।

মঙ্গল কি শুধু শূন্য মরুভূমি? নাকি তার বুকে লুকিয়ে রয়েছে আরও বহু গোপন বার্তা? ফিপসাকস্লার সন্ধান যেন সেই রহস্যের আরেকটি দরজা খুলে দিল।