🔴 ‘নতুন রক্ত’ নাকি নেতৃত্বে খরা? সিপিএমের চার জেলা সম্পাদক একসঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে!

সিপিএমের চার জেলা সম্পাদক একসঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে!

সিপিএমে নেতৃত্ব বদলের ঢেউ উঠলেও, তাতে উঁকি দিচ্ছে গভীর এক সংকট। সদ্যসমাপ্ত মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে নেতৃত্বে ‘নতুন মুখ’ তুলে আনার চেষ্টা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতেও যেন স্পষ্ট হয়েছে— বাংলায় বাম নেতৃত্বের ঘাটতি এখন এক বাস্তব চিত্র।

মাদুরাইয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন সদস্য হয়েছেন ৩১ জন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নতুন অন্তর্ভুক্ত ৫ জন। এর মধ্যে চারজনই আবার জেলা সম্পাদক! এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এঁদের মধ্যে দেবলীনা হেমব্রম ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক হয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকা অবস্থায়। বাকিরা হলেন— দেবব্রত ঘোষ (হুগলি), সৈয়দ হোসেন (পূর্ব বর্ধমান) এবং সমন পাঠক (দার্জিলিং)। চারজনই রাজ্য কমিটির সদস্য; দেবলীনা ও দেবব্রত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও আছেন।

এখানে প্রশ্ন উঠছে— সিপিএমের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন নেতা একসঙ্গে তিনটি স্তরে থাকতে পারেন না, এর ব্যতিক্রমে চাই বিশেষ অনুমোদন। তাহলে একসঙ্গে চার জেলা সম্পাদকের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা কীভাবে সম্ভব? দলের অন্দরের অনেকে একে ‘ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি’র ফল বলেই ব্যাখ্যা করছেন।

অতীতে এমন উদাহরণ আছে বটে, তবে তা এক বা দু’জনের ক্ষেত্রে। উদাহরণস্বরূপ, গৌতম দেবকে এক সময় উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি তখন কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শমীক লাহিড়ী এবং নদিয়ায় সুমিত দে একইভাবে ছিলেন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। তবে একসঙ্গে চারজন— এটা সত্যিই নজিরবিহীন।

এই পরিস্থিতিতে বড় প্রশ্ন হচ্ছে— এত ‘ব্যতিক্রম’ কেন? উত্তরটা খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হয় অতীতের দিকে। এক সময় এক জেলায় একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কাজ করতেন, কিন্তু কেউ জেলা থেকে দল চালাতেন না। যেমন, নিরুপম সেন বা মদন ঘোষরা বর্ধমানের নেতৃত্বে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু জেলা সম্পাদক ছিলেন না। জেলা সামলাতেন নিচুতলার অন্য নেতারা।

আজ সেই ভারসাম্য আর নেই। দলের মধ্যে একাধিক নেতা মেনে নিচ্ছেন— দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার জন্য যতজন দক্ষ ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব দরকার, ততটা মেলে না এখন। ফলে দলের কেন্দ্রীয় স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত একই ব্যক্তিকে বহন করতে হচ্ছে একাধিক দায়িত্ব।

তবে প্রশ্ন উঠছে— এই চার জেলা সম্পাদক কি এখন পদ ছাড়বেন? এখনও দলের পক্ষ থেকে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অনেকের মতে, সেটাও সম্ভব নয়। কেননা নতুন মুখ উঠে আসছে ঠিকই, কিন্তু নেতৃত্ব গড়ার ক্ষেত্রটা এখনও অনেকটাই ফাঁকা।

সব মিলিয়ে, সিপিএমের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ— নতুন নেতৃত্বকে শুধু সুযোগ দেওয়া নয়, তাদের ধরে রাখাও। নাহলে ‘প্রজন্ম বদলের’ কথাটা শুধু কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।

রুই-কাতলার একঘেয়েমিতে বিরাম! স্বাদ বদল আনতে রান্না করুন ট্যাংরা মাছের ঝালঝালে তেল-ঝাল