🔥 যাদব বাড়িতে ‘মুষলপর্ব’! রোহিণীর পর দিল্লিমুখী আরও তিন কন্যা, নির্বাচনী ভরাডুবিতেই ফাটল নবরত্নসভায় 🔥

যাদব বাড়িতে ‘মুষলপর্ব’!

বিহারের নির্বাচন-পরবর্তী অস্থিরতায় যাদব পরিবারের ভাঙন যেন দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। কয়েক দিন আগেই লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য পরিবারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। তাঁর অভিযোগে তেজস্বী যাদব ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই রবিবার পটনার সরকারি বাসভবন ছাড়লেন লালুর আরও তিন কন্যা— রাজলক্ষ্মী, রাগিনী এবং চন্দা।

পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, নির্বাচনে আরজেডির ভরাডুবির সঙ্গে সঙ্গে বহুদিনের চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়েছে। যাদব পরিবারে যে টানাপোড়েন এতদিন গোপনে রয়ে গিয়েছিল, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তা আর চাপা রাখা গেল না। রাজনৈতিক ব্যর্থতা, পারিবারিক মতবিরোধ এবং তেজস্বী ঘনিষ্ঠদের ‘ক্ষমতার দাপট’— সব মিলিয়ে অসন্তুষ্ট তিন বোন দিল্লিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

রোহিণীর বিস্ফোরণেই শুরু অগ্নিকাণ্ড

দু’ বছর আগে অসুস্থ লালুকে নিজের কিডনি দান করে আলোচনায় আসেন রোহিণী। সেই রোহিণীই প্রথম প্রকাশ্যে পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সমাজমাধ্যমে তিনি দাবি করেন—
তাঁকে নোংরা বলা হয়েছে, বাবাকে দেওয়া কিডনি নিয়েও বিদ্রুপ করা হয়েছে, এমনকি বাড়ি ছাড়ার আগে তাঁকে মারার জন্য জুতো তুলেছিলেন কিছু আত্মীয়!

তিনি লেখেন—
“আমার নোংরা কিডনি বাবাকে দিয়েছি— এমন অপমান পর্যন্ত শুনতে হয়েছে। কোটি কোটি টাকা নিয়েছি, টিকিট কিনেছি— এইসব মিথ্যে অভিযোগেই আমাকে জর্জরিত করা হয়েছে।”

তাঁর এই পোস্ট রাতারাতি সাড়া ফেলে। আর সেই আগুনে ঘি ঢালেন বড় ভাই, লালুর ত্যাজ্যপুত্র তেজপ্রতাপ। তিনি সরাসরি তেজস্বীর ঘনিষ্ঠদের অভিযুক্ত করে লেখেন—
“আমার বোনকে জুতো তোলার কথা ভাবাও অপরাধ। এর পরিণাম ভাল হবে না।”

তেজপ্রতাপ— বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

যাদব পরিবারের অন্তর্কলহের সূত্রপাত মূলত তেজপ্রতাপকে ঘিরেই। গত মে মাসে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক যুবতীর সঙ্গে ‘১২ বছরের সম্পর্ক’-এর দাবি করা একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। যদিও তিনি বলেন, অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। তবুও লালু ও রাবড়ী দেবী ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’-এর অভিযোগে তাঁকে পরিবার ও দল থেকে বহিষ্কার করেন।

এরপরই তেজপ্রতাপ গঠন করেন নতুন দল— জনশক্তি জনতা দল। কিন্তু ২২টি আসনে লড়াই করেও একটিও জিততে না পারায় তাঁর ক্ষোভ সীমা ছাড়ায়।

আরজেডির ভরাডুবিতে দায়ী কে?

গত বার ৭৫ আসন পাওয়া আরজেডির সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২৫-এ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিবারের ভিতরকার দন্দ্ব যে ভোটে প্রভাব ফেলেছে তা স্পষ্ট।

রোহিণী স্পষ্টভাবেই দায়ী করছেন তেজস্বী যাদবকে ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ—

• আরজেডি সাংসদ সঞ্জয় যাদব
• তেজস্বীর পুরনো বন্ধু রমীজ

তাঁদের ‘অতিরিক্ত দাপট’ নিয়েই ক্ষুব্ধ বহু পরিবারের সদস্য।

যাদববংশ কি তবে মুষলপর্বে?

মহাভারতের যদুবংশ ধ্বংস হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বিবাদে। সেই উপমা টানছেন অনেকেই। কারণ—

• লালুর ৯ সন্তানের মধ্যে তিনজন সক্রিয় রাজনীতিতে
• বাকিরা গুরুত্বপূর্ণ পরিবারে বিবাহিত
• কিন্তু এখন বাড়ছে ভুল বোঝাবুঝি, দূরত্ব আর অভিযোগ

এমন পরিস্থিতি লালু-রাবড়ীর জন্য চরম অস্বস্তির। বর্ষীয়াণ নেতা লালু কি এই ভাঙন মেরামত করতে পারবেন? নাকি আরজেডির ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে ডুবে যাবে— উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে।