🔥 ‘অপারেশন ইন্দ্রাবতী’: যৌথবাহিনীর অভিযানে বস্তারের জঙ্গলে মাওবাদীদের বড় ধাক্কা, গুলির লড়াইয়ে নিহত ছ’জন গেরিলা

অপারেশন ইন্দ্রাবতী!

ছত্তীসগড়ের ঘন জঙ্গলে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। মঙ্গলবার সকালে বিজাপুর জেলার ইন্দ্রাবতী জাতীয় উদ্যান এলাকায় যৌথবাহিনীর তল্লাশি অভিযানে মাওবাদীদের সঙ্গে তীব্র গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ছ’জন মাওবাদী গেরিলার। অভিযানে জওয়ানদের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকও উদ্ধার হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই এই সফল অভিযানের প্রশংসা করে বলেছেন,

“কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজির প্রতিশ্রুতি মতোই ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ছত্তীসগড় থেকে মাওবাদীদের সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে।”

🌲 বস্তারের জঙ্গলে সকাল থেকেই যৌথ অভিযান

বিজাপুরের পুলিশ সুপার জিতেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, মাওবাদীদের গোপন আস্তানার খবর পেয়ে ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (DRG) ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) সদস্যরা সকালে তল্লাশি শুরু করেন। দান্তেওয়াড়া সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ি ও ঘন জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে চলছিল অভিযান। হঠাৎই তাদের মুখোমুখি হয় সিপিআই (মাওবাদী)-র সশস্ত্র শাখা পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (PLGA)-র একদল গেরিলা।

দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গুলির লড়াই চলে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF), ছত্তীসগড় সশস্ত্র পুলিশ (CAF) এবং বস্তার টাইগার্স-এর বিশেষ বাহিনী। যৌথবাহিনীর সমন্বিত অভিযানে অবশেষে ছয় মাওবাদীর দেহ উদ্ধার হয়।

💣 অস্ত্রভান্ডার উদ্ধার, আহত গেরিলার গ্রেফতার

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে আধুনিক ইনসাস রাইফেল, .৩০৩ রাইফেল, দেশি বন্দুক, বিস্ফোরক ও ডেটোনেটর।
তল্লাশির সময় বহু মাওবাদী গেরিলা আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। পরে তরলাগুড়া এলাকার আন্নারাম গ্রামের জঙ্গলে এক আহত মাওবাদীকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি রেডিও সেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও বোমা তৈরির উপকরণ।

🪓 ‘ফাঁদে পড়া’ মাওবাদী বাহিনী: কৌশল বদলে অভিযান

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযানটি ছিল “ফাঁদে ফেলা মিশন”।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্দ্রাবতী জঙ্গলে মাওবাদীদের একাধিক চলাচল নজরে আসে। স্যাটেলাইট তথ্য ও স্থানীয় গ্রামবাসীর ইনপুট অনুযায়ী যৌথবাহিনী একটি ঘিরে ফেলার কৌশল নেয়।
বিজাপুর ও দান্তেওয়াড়ার সংযোগস্থলে তিনদিক থেকে জওয়ানরা অগ্রসর হন, যাতে পালানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। সূত্রের দাবি, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মাওবাদী কমান্ডার স্তরের অন্তত দু’জন সদস্য।

🗣️ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা: “মাওবাদ-মুক্ত ছত্তীসগড় আমাদের লক্ষ্য”

অভিযানের পরে মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,

“অমিত শাহজির নির্দেশ মতো যৌথ অভিযান এখন আরও জোরদার হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে। ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ছত্তীসগড় হবে সম্পূর্ণ মাওবাদ-মুক্ত।”

তিনি আরও জানান, সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় বস্তার, সুকমা ও দান্তেওয়াড়ার মতো মাওবাদ-প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে উন্নয়নমূলক কাজও চলছে। রাস্তা, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যাতে মাওবাদীদের প্রভাব কমে।

⚔️ মাওবাদী দমন অভিযান: নতুন গতি

এই বছরের শুরু থেকেই ছত্তীসগড়ে মাওবাদী দমন অভিযান নতুন দিশা পেয়েছে। মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যে ১৫টিরও বেশি সংঘর্ষে ৭০ জনেরও বেশি মাওবাদী নিহত ও শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে।

বিজাপুর, নারায়ণপুর ও সুকমা—এই তিন জেলা এখনও সবচেয়ে স্পর্শকাতর। তবে সাম্প্রতিক অভিযানে মাওবাদীদের কার্যত ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

🔚 শেষকথা: বস্তারের জঙ্গলে শান্তির বাতাস?

ছত্তীসগড় প্রশাসনের দাবি, এবার লড়াই শুধু অস্ত্রের নয়—এটি উন্নয়ন ও আস্থার যুদ্ধ।
যেখানে একদিকে চলছে বন্দুকের গর্জন, অন্যদিকে চলছে সড়ক, স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণের কাজ।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাওবাদীদের মূল শিকড় উপড়ে ফেলতে গেলে কেবল বন্দুক নয়, মানুষের হৃদয়ে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাই হবে চূড়ান্ত জয়।
আর ইন্দ্রাবতীর জঙ্গলে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সেই দীর্ঘ পথের আরেকটি অধ্যায় মাত্র।