🔍 দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন সন্দেহের কেন্দ্রে— প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ সিদ্দিকির দিকে গোয়েন্দাদের নজর

দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন সন্দেহের কেন্দ্রে!

লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের তদন্ত যত এগোচ্ছে, তত নতুন নতুন দিক উঠে আসছে। তদন্তকারীরা এখন স্পষ্ট ইঙ্গিত পাচ্ছেন— এই বিস্ফোরণ শুধু স্থানীয় নয়, এর পিছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত চক্র, যার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়। ধৃত তিন চিকিৎসক— শাহিন সইদ, মুজাম্মিল শাকিল এবং উমর উন-নবি— তিন জনের সঙ্গেই কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে তদন্তকারীদের প্রধান নজর এখন আল-ফালাহ্‌-র প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ আহমেদ সিদ্দিকির দিকে।

🏥 আল-ফালাহ্‌ হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ: সন্দেহভাজনদের কেন্দ্রীয় সংযোগ

ধৃত মুজাম্মিল ও শাহিন দু’জনেই কর্মরত ছিলেন আল-ফালাহ্‌ হাসপাতালে। এমনকি শ্রীনগরে জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগে গ্রেফতার আদিল মাজিদ রাথরের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে একই কলেজ।
এতে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

তদন্তকারীদের একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানায়—
সিদ্দিকির বিরুদ্ধে রয়েছে পুরনো প্রতারণার মামলা, ৭.৫ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগে তিনি তিন বছর জেল খেটেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০১ সালে মামলা হয়, ২০০৩ সালে জামিন খারিজ হয়, এবং শেষে ২০০৪ সালে বাইরে আসেন।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী মহম্মদ রাজি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

💰 অর্থপাচারের সন্দেহ— ইডির তদন্ত শুরু

আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল নিয়ে সন্দেহ থাকায় ইডি ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন্সিক অডিটও শুরু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিস্ফোরণের ঠিক পরের দিনই উচ্চস্তরের বৈঠকে এই নির্দেশ দেন।

🚗 বিস্ফোরণের চালক— উমর উন-নবি, ডিএনএ মেলাল তদন্তকারীরা

হুন্ডাই আই ২০ গাড়িতে বসানো বিস্ফোরকের ধাক্কায় চালকের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে—
গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চিকিৎসক উমর উন-নবি।
মায়ের ও ভাইয়ের ডিএনএ-র সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।

সিসিটিভি ফুটেজেও বিস্ফোরণের কিছু আগে তাঁকে গাড়িতে দেখা যায়। পুলিশ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেখে প্রথমে মালিক সলমনকে আটক করে। সলমন জানান, গাড়িটি তিনি আগেই বিক্রি করেছিলেন। সেই সূত্রেই উঠে আসে উমরের নাম।

🕌 বিস্ফোরণের আগে মসজিদে প্রবেশ— প্রকাশ্যে নতুন সিসিটিভি ফুটেজ

নতুন ফুটেজে দেখা যাচ্ছে—
বিস্ফোরণের এক ঘণ্টা আগে উমর তুর্কমান গেটের ফাইজ-ই-ইলাহি মসজিদে প্রবেশ করেন।
কালো পোশাকে একা হেঁটে গিয়ে মসজিদে ঢোকার এই ফুটেজ এখন তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।

🚓 কানপুর থেকে আরও এক চিকিৎসক গ্রেফতার

উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে আটক হয়েছেন আরও এক চিকিৎসক—
মহম্মদ আরিফ, হৃদ্‌রোগবিদ্যায় পড়াশোনা করা এই যুবকের সঙ্গে শাহিন সিদ্দিকীর যোগাযোগ ছিল।
এনআইএ-র জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য উঠে আসার আশা।

🕸️ তুরস্ক থেকে নির্দেশ— ‘উকাসা’ নামের হ্যান্ডলারের ভূমিকা

তদন্তকারীদের দাবি—
উমর ও তার দলে নির্দেশ দিচ্ছিলেন রহস্যময় হ্যান্ডলার ‘উকাসা’, যিনি অবস্থান করছিলেন তুরস্কে।
‘উকাসা’ আরবি শব্দ, যার অর্থ মাকড়সা।
এই সাঙ্কেতিক নাম ব্যবহার করে উমরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হতো, এবং নির্দেশ আসত জইশ-ই-মহম্মদ ও আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দের মাধ্যমে।

🚗 ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ছক— ৩২টি গাড়ি চিহ্নিত!

বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিল শুধু এক জায়গা নয়—
দেশব্যাপী ৩২টি গাড়িতে বিস্ফোরক বোঝাই করে রাখা হয়েছিল, এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের।
ব্রেজ়া, ডিজায়ার, ইকোস্পোর্ট— আরও কয়েকটি গাড়ির সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

🏛️ ন্যাকের শোকজ— আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি নেই

ন্যাক জানিয়েছে— আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয় কখনও অ্যাক্রিডিটেশনের জন্য আবেদনই করেনি।
তবুও তাদের ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এই অভিযোগে ন্যাক শোকজ নোটিস পাঠিয়েছে।

🇺🇸 মার্কিন বিদেশসচিবের প্রশংসা

মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো জানিয়েছেন—
তারা ভারতের তদন্তে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে ভারতের সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই “অসাধারণ” কাজ করছে।

সারসংক্ষেপ

দিল্লি বিস্ফোরণ এখন শুধু একটি সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত নয়—
এটি হয়ে উঠছে এক জটিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, অর্থপাচার, ভুয়ো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জঙ্গি মডিউলের গভীর জালের অনুসন্ধান।
আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয় ও তার প্রতিষ্ঠাতাকে ঘিরে তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে— এই কাণ্ডের শেকড় অনেক গভীরে।