📰 আপস নয়, তবু ‘গঠনমূলক’— ট্রাম্প-দূতদের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার পর মস্কোর কড়া বার্তা

ট্রাম্প-দূতদের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার পর মস্কোর কড়া বার্তা

ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়া-আমেরিকা বিবাদ কখন থামবে— সেই প্রশ্ন এখনো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত। মঙ্গলবার মস্কোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ বৈঠকের পরও পরিস্থিতি যে বিশেষ বদলায়নি, তা স্পষ্ট করে দিল ক্রেমলিন। রুশ সরকারের দাবি, আলোচনাটি ছিল ‘‘গঠনমূলক’’— কিন্তু আপসের কোনও পথ বর্তমানে খোলা নেই। একই সঙ্গে আমেরিকাও যে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি নয়, তাও জানিয়েছে মস্কো।

মঙ্গলবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনেনি কোনও পক্ষই। তবে বৈঠকের পর ক্রেমলিনের শীর্ষ পরামর্শদাতা ইউরি উশাকভ জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে যে চারটি সম্ভাব্য সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তার কয়েকটিতে আলোচনার দরজা খোলা থাকলেও মূল দাবিগুলিতে রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত। তাঁর কথায়,
“ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত অঞ্চল নিয়ে আপসের প্রশ্নই ওঠে না। কিছু প্রস্তাব আমাদের অবস্থানের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না।”

উশাকভ আরও জানান, আলোচনায় কিছু বিষয়ে দু’পক্ষের মিল থাকলেও প্রধান ইস্যুগুলিতে কোনও অগ্রগতি হয়নি। তা সত্ত্বেও তিনি এই বৈঠককে ‘‘কার্যকর’’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি,
“ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে এখনও অনেক আলোচনা বাকি। ইউক্রেন সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে এটিকে প্রাথমিক ধাপ হিসেবেই দেখা উচিত।”

ক্রেমলিন সূত্র বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। পুতিন স্পষ্ট করেছেন, সেই অঞ্চলগুলির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে রাশিয়া আপস করবে না। অপর দিকে আমেরিকা চায়, কিয়েভের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় ফিরে আসুক রাশিয়া। দুই দেশের অবস্থানে এই মৌলিক পার্থক্যই আলোচনার অগ্রগতি আটকে দিচ্ছে।

উশাকভ জানান, বৈঠকে পুতিন ট্রাম্পের উদ্দেশে কিছু ‘‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’’ পাঠিয়েছেন উইটকফ ও কুশনারের মাধ্যমে। যদিও সেই বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি। তাঁর কথায়,
“আলোচনার বড় অংশই গোপন থাকবে। এখনই বলা যাবে না আমরা সংকট সমাধানের খুব কাছাকাছি।”

অন্য দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও পরিস্থিতির জটিলতা স্বীকার করেছেন। নিজের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প জানান,
“ইউক্রেন প্রসঙ্গ সহজ নয়। তবে আমাদের দূতেরা সমাধান খুঁজতে মস্কোয় কঠোর পরিশ্রম করছেন।”
ট্রাম্পের একমাত্র লক্ষ্য— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত অবসান। যদিও এই মুহূর্তে তাঁর প্রশাসনের তরফেও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দুই দেশের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ ও জ্বালানি বাজারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনও সমাধানে রাজি নয় পুতিন— মস্কোর বক্তব্যে তা ফের স্পষ্ট।

তাই ট্রাম্পের দূতদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পরও শান্তি প্রক্রিয়া কতদূর এগবে, তা নিয়ে সন্দেহ কাটছে না বিশেষজ্ঞমহলে। ক্রেমলিন যদিও বলেছে, আলোচনা চালু থাকবে। কিন্তু কবে এবং কীভাবে যুদ্ধ থামবে— সেই উত্তর এখনও অনিশ্চয়তার গহ্বরে।