🏏 ইডেনের ‘২২ গজে’ বিভ্রান্তি: সৌরভ বললেন ‘সব ঠিক’, গম্ভীরের মুখে অসন্তোষ, কিউরেটর সুজনের দাবি—স্পিন চাইছিল ভারতীয় দল

🏏 ইডেনের ‘২২ গজে’ বিভ্রান্তি!

ইডেন গার্ডেন্সের টেস্ট ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার মাঝেই শুরু হয়ে গেল ‘পিচ বিতর্ক’। সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেখানে দাবি করেছেন, ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে কোনও বিশেষ অনুরোধ আসেনি, সেখানে ইডেনের পিচ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় বললেন উল্টো কথা— ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর নাকি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তিনি চান আরও স্পিন সহায়ক পিচ।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের আগে এই দ্বিমুখী সুরে এখন কলকাতার ক্রিকেট মহল সরগরম।

🏟️ ইডেনে তিন ঘণ্টা অনুশীলন, তবু ‘খুশি নন’ গম্ভীর

মঙ্গলবার সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা অনুশীলন করেছে ভারতীয় দল। অনুশীলন শেষে গম্ভীর, অধিনায়ক শুভমন গিল, ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক এবং বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল একসঙ্গে পিচ পর্যবেক্ষণে নামেন।

পিচের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে পরীক্ষা করেন শুভমন ও মর্কেল। কিছুক্ষণ পর কিউরেটর সুজনকে ডেকে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেন তাঁরা। উপস্থিতদের চোখে পড়ে, ভারতীয় শিবিরের মুখে অখুশির ছাপ। তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তব পিচের পার্থক্য যে স্পষ্ট, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয় সুজনকে।

🧱 “আরও স্পিন চাইছিল দল,” স্বীকার করলেন কিউরেটর

সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুজন মুখোপাধ্যায় বলেন,

“হোম টিমের সঙ্গে যেভাবে সাধারণত কথা হয়, তেমনই হয়েছে। গম্ভীররা একটু বেশি স্পিন সহায়ক উইকেট চেয়েছিলেন। খুব বেশি নয়, বর্তমান পিচের তুলনায় সামান্য বেশি টার্নিং ট্র্যাক।”

তবে অতিরিক্ত ঘূর্ণন পেলে ব্যাটিং বিপাকে পড়তে পারে কি না, সে বিষয়ে কিউরেটরের জবাব,

“এটা খেলোয়াড়রা বলতে পারবে। আমাদের কাজ হলো সবার জন্য ভালো, ব্যালান্সড পিচ তৈরি করা।”

সুজনের দাবি, ইডেনের এই ২২ গজে “ব্যাটার ও বোলার দু’পক্ষই সুযোগ পাবে”— খেলায় ভারসাম্য থাকবে।

🧩 সৌরভের উল্টো কথা: “কোনও অনুরোধ পাইনি”

কিন্তু সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,

“আমরা ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে পিচ নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট অনুরোধ পাইনি। আমাদের কাজ একটি স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করা, যা খেলার মান বজায় রাখবে।”

তবে সূত্র বলছে, গম্ভীর এবং দলের অন্য সদস্যরা অনানুষ্ঠানিকভাবে পিচের চরিত্র নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, যদিও লিখিত অনুরোধ করেননি। ফলে, সৌরভের বক্তব্য হয়তো প্রশাসনিক দিক থেকেই সঠিক।

🌾 পিচের বর্তমান অবস্থা: শুকনো, শক্ত ও হালকা বাদামি

সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে মূল পিচে জল দেওয়া হয়নি। তার উপরের স্তর শুকনো ও শক্ত, রঙে হালকা বাদামি। কিছু জায়গায় অল্প ঘাস থাকলেও সেগুলো প্রায় মরে গেছে।

পিচের আশপাশে সামান্য জল দেওয়া হচ্ছে যাতে পার্শ্ববর্তী অংশে আর্দ্রতা থাকে, কিন্তু মূল পিচে এক ফোঁটাও জল দেওয়া হচ্ছে না। ফলে, চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে বল ঘুরবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

🔄 গম্ভীরের পরিকল্পনা ও দলের ভাবনা

ভারতের দলে রয়েছে রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব, অক্ষর পটেল, ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো চারজন কার্যকর স্পিনার। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা ঐতিহ্যগতভাবে স্পিনে দুর্বল। তাই ভারতীয় শিবির চাইছে এমন একটি উইকেট, যা ম্যাচের দ্বিতীয় দিন থেকেই টার্ন দিতে শুরু করবে।

কিন্তু ইডেনের বর্তমান পিচ তুলনামূলকভাবে “ব্যালান্সড”— যেখানে প্রথম তিন দিন পেসারদের সাহায্য মিলবে, আর শেষ দুই দিন ধীরে ধীরে স্পিনাররা খেলায় ফিরবেন।

গম্ভীর এই অবস্থায় খানিক হতাশ হলেও, কিউরেটর ও সিএবি কর্তারা বলছেন, ম্যাচ যত এগোবে, “বল ঘুরবেই, দর্শকেরা দারুণ লড়াই দেখবেন।”

🏏 শেষ কথা: সৌরভ বনাম গম্ভীর, নাকি কৌশলগত বিভ্রান্তি?

ইডেনের ২২ গজ নিয়ে এই দ্বন্দ্ব এখন ক্রিকেট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কেউ বলছেন, এটি নিছক প্রশাসনিক যোগাযোগের ঘাটতি, কেউ বলছেন এটি গম্ভীরের কৌশলগত চাপ প্রয়োগ।

যাই হোক, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্টের আগেই ইডেনের পিচ হয়ে উঠেছে ম্যাচের “প্রথম প্রতিপক্ষ”।
এখন দেখা যাক— সৌরভের ‘স্পোর্টিং উইকেট’ জয়ী হয়, না গম্ভীরের ‘টার্নিং ট্র্যাক’-এর স্বপ্ন পূরণ হয়।