🍷 মেজাজ কেন হালকা হয় মদ্যপানে? রহস্য লুকিয়ে আদিম পূর্বপুরুষের স্বভাবে

মেজাজ কেন হালকা হয় মদ্যপানে?

আজকের বিশ্বে মদ্যপানকে আর শুধুই নৈতিকতার ছাঁচে দেখা হয় না। ব্যস্ত দিনের শেষে বন্ধুদের সঙ্গে পাব বা বারে বসে এক পাত্র পান করে একটু স্বস্তি খুঁজে নেওয়া অনেকের কাছেই স্বাভাবিক অভ্যাস। কাজের চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন বা মানসিক উদ্বেগ—এক চুমুক অ্যালকোহল অনেকের মনেই যেন মুহূর্তে হাল্কা হাওয়া বইয়ে দেয়। কয়েক চুমুকের পর তো মনে হয় রাগ-দুঃখ-অভিমান সবই যেন একটু দূরে সরে গেল!

কেন এমন হয়? কী এমন আছে অ্যালকোহলে, যা মানবমস্তিষ্ককে মুহূর্তে হালকা করে দেয়? বিজ্ঞানীরা বলছেন—উত্তর লুকিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ বছর আগের মানুষের পূর্বপুরুষদের স্বভাবের মধ্যে।

🍌 মদ্যপানের শিকড় কি কয়েক কোটি বছর পুরনো?

‘বায়োসায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিস্তৃত গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, মানুষের মদ্যপান অভ্যাসের সূত্রপাত আধুনিক সভ্যতার বহুকাল আগেই। ডার্টমাউথ কলেজের নৃতত্ত্ববিদ ন্যাথানিয়েল ডোমিনি জানিয়েছেন—

৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানো মানুষের পূর্বসূরিরা, যেমন গরিলা, এপ ও শিম্পাঞ্জি, খুবই পছন্দ করত মজে যাওয়া বা ফারমেন্টেড ফল। এই ফলগুলিতে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হত ইথানল, যা এক ধরনের অ্যালকোহল।

গবেষণায় দেখা গেছে—

• পূর্বপুরুষদের দেহে ইথানল ভাঙতে সক্ষম এনজাইমের ক্ষমতা ছিল অন্য প্রাণীদের তুলনায় প্রায় ৪০% বেশি।
• ফলে তারা সহজেই মদ্যপ ফল হজম করত।
• মানব মস্তিষ্কে ফারমেন্টেড স্বাদের প্রতি আকর্ষণ সম্ভবত সেই সময় থেকেই গড়ে ওঠে।

সোজা ভাষায় বললে, আধুনিক মদের আকর্ষণ আসলে প্রাচীন জীববৈজ্ঞানিক অভ্যাসেরই ধারাবাহিকতা!

🍷 মানুষ কেন ফল ফারমেন্ট করে সুরা বানাল?

গবেষকেরা মনে করছেন, মদ্যপ ফলের স্বাদের প্রতি এই আকর্ষণই পরে মানুষের মধ্যে সুরা তৈরির প্রবণতা তৈরি করেছে।

মানুষ যখন কৃষিকাজ শুরু করল, তখনই টের পেল—
ফলকে রেখে দিলে তা নিজে থেকেই মদ তৈরি করে।
এই পরিচিত স্বাদই ধীরে ধীরে অ্যালকোহলকে মানুষের খাদ্য ও সংস্কৃতির অংশ করে তোলে।

🐒 আফ্রিকার বানরদের আচরণে মদ্যপানের ছায়া

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’-এ লিখেছেন—

আফ্রিকার জঙ্গলে থাকা শিম্পাঞ্জিরাও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পাকা ও মজে যাওয়া ফল খায়।
গবেষণানুসারে:

• দিনে প্রায় ১০ পাউন্ড ফল তারা খায়,
• যা থেকে শরীরে ঢুকে যেতে পারে দেড় পাত্র সুরার সমান অ্যালকোহল।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—
ফল খাওয়ার সময় তাদের আচরণেও দেখা গেছে বন্ধুত্বপূর্ণ, সামাজিক প্রবণতা—যেমনটি মানুষ মদ্যপানে অনুভব করে।

অর্থাৎ, মদ্যপানের পরে মানুষে-মানুষে যে সামাজিক বন্ধন, খোলামেলা ভাব দেখা যায়, তার ছাপ পাওয়া যায় শিম্পাঞ্জিদের মধ্যেও।

🍸 মদ্যপানে মেজাজ হালকা হওয়ার আসল কারণ

বিজ্ঞান বলছে—

মদ্যপান করার পরে শরীরে ডোপামিন ও এন্ডোরফিন নামে সুখের হরমোন দ্রুত বেরোতে শুরু করে।
এই রাসায়নিক পরিবর্তন—

• মন হালকা করে,
• উদ্বেগ কমায়,
• সামাজিক মেলামেশায় স্বাচ্ছন্দ এনে দেয়।

আর এই প্রতিক্রিয়া আমাদের দেহে গভীরভাবে গেঁথে আছে লক্ষ বছরের জৈব বিবর্তনের কারণে।