🌺 অনুপম বিদায়: বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রস্থান, বাংলা সিনেমার সোনালি যুগের আর এক বাতি নিভল

বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রস্থান!

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আজ যেন আরও একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। দীর্ঘ অসুস্থতার লড়াই শেষে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। রবিবার গভীর রাতে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পীমহলে। উত্তমকুমারের সহ-অভিনেতা হিসেবে বহু স্মরণীয় চরিত্রে অভিনয় করা এই প্রখ্যাত শিল্পী বহুদিন ধরেই অসুস্থতায় শয্যাশায়ী ছিলেন।

আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে সোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিগন্ত বাগচী জানিয়েছেন, দীর্ঘ রোগভোগই মৃত্যুর কারণ। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডসহ নানা জটিল অসুখে ভুগছিলেন তিনি। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। স্বাস্থ্যগত সীমাবদ্ধতার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে অভিনয়জগৎ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন কল্যাণ। শিল্পীমহলের সদস্যরা নিয়মিত তাঁর পাশে থেকেছেন, যতটা সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ রাতেই হাসপাতাল থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলা চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন দুনিয়া।

🎬 অভিনয়ের যাত্রাপথ – সোনালি দিনের স্মৃতি

পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন কল্যাণ। তাঁর প্রথম ছবি তপন সিংহের পরিচালিত ‘আপনজন’, যা তাঁকে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় দৃঢ় জায়গা করে দেয়। এরপর একে একে ‘সাগিনা মাহাতো’, ‘ধন্যি মেয়ে’ সহ প্রায় ৪০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি—যা নিজেই এক রেকর্ড।

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় এবং তপন সিংহ দু’জনেরই তাঁকে বিশেষ পছন্দ ছিল। তাঁর অভিনয়ে ছিল স্বাভাবিকতার ছাপ, সহজ সরল এক ঘরোয়া চরিত্রে যেমন তিনি সাবলীল, তেমনই তীক্ষ্ণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে সিরিয়াস চরিত্রেও রেখেছেন গভীর ছাপ। বাংলা সিনেমার শ্রেষ্ঠতম শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর—সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে, সন্তু মুখোপাধ্যায়—সকলেই তাঁর সমসাময়িক।

শুধু বড়পর্দা নয়, ছোটপর্দাতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন কল্যাণ।
‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিক, সিরিজ ‘তানসেনের তানপুরা’, এবং সুজয় ঘোষের বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘কাহানি’—সবেতেই তাঁর অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করেছে।

⭐ কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়– বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ

বাংলা সিনেমার সোনালি যুগের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। কখনও উত্তমকুমারের পাশে সহ-অভিনেতা, কখনও গল্পের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র—সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র, অনন্য। তাঁর উপস্থিতি ছিল পর্দায় এক প্রশান্তির ছায়া। আজও দর্শকের মনে তাঁর সংলাপ, অভিব্যক্তি, অভিনয়—সব আছে অমলিন।

তাঁর চলে যাওয়া মানে এক যুগের অন্তিম অধ্যায়। টলিউড শোকাহত। শিল্পীরা তাঁদের স্মৃতিচারণায় জানাচ্ছেন—কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বিনয়ী, মধুর ব্যবহারকারী এবং সত্যিকারের শিল্পী।