🌟অনমনীয় ইচ্ছাশক্তির জয়: পাঁচ লক্ষে সার্কাসে বিক্রি হতে হতে আজ ভাবনগরের গর্ব—ডাক্তার গণেশ বরইয়া 🌟

অনমনীয় ইচ্ছাশক্তির জয়!

মাত্র তিন ফুট উচ্চতা, শরীরে ৭২ শতাংশ অক্ষমতা—এই দুই লেবেলই যদি কারও ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তবে সেই লেবেলকে মুছে ফেলে ইতিহাস গড়েছেন গুজরাতের ভাবনগরের গোরখি গ্রামের গণেশ বরইয়া। যাঁকে কোনও দিন ভেবেছিল সার্কাসকেই নাকি তাঁর ভবিষ্যৎ! আর আজ তিনি স্যর টি জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে কর্মরত গর্বিত এমবিবিএস চিকিৎসক।

তাঁর সাদা অ্যাপ্রন, গলায় স্টেথোস্কোপ—সবই যেন অমর বার্তা দেয়, “অক্ষমতা নয়, মনই মানুষের শক্তি।”

শৈশবেই ‘মূল্য নির্ধারণ’—সার্কাসে বিক্রির প্রস্তাব!

গণেশ ছিলেন বাবা-মায়ের অষ্টম সন্তান এবং প্রথম ছেলে। জন্ম থেকেই গ্রোথ হরমোনের সমস্যা থাকায় তাঁর উচ্চতা বাড়েনি। মাত্র ১০ বছর বয়সে সার্কাসদলের কয়েক জন তাঁকে ‘কিনে নেওয়ার’ প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। দাম—পাঁচ লাখ টাকা! দাবি করে, সার্কাস ছাড়া তাঁর নাকি কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

কিন্তু দরিদ্র কৃষক বাবা দৃঢ় ভাবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তিনি জানতেন—পুত্রকে হারালে তিনি সব হারাবেন। সেই দিনই হয়তো জন্ম নেয় গণেশের মনে প্রথম প্রতিজ্ঞা—“উচ্চতা যত ছোটই হোক, স্বপ্ন বড় হবেই।”

অক্ষমতা নয়, সাহসের হাত ধরে শিক্ষার পথে

স্কুলে যাওয়া ছিল কঠিন। দিদিরা তাঁকে কোলে করে নিয়ে যেত, কখনও আবার বাবা মাথায় বসিয়ে নিয়ে যেতেন। গণেশ বুঝেছিলেন—জীবন তাঁকে সহজ রাস্তা দেবে না। তাই প্রতিটি চ্যালেঞ্জই তাঁর কাছে হয়ে ওঠে যুদ্ধ।

বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে শিক্ষিত করা। সেই স্বপ্নই গণেশ পূরণ করলেন অদম্য লড়াইয়ে।

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির লড়াই—হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট

২০১৮ সালে প্রতিবন্ধী কোটায় মেডিক্যাল প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হলেও জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিল তাঁকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে।

যুক্তি—“এত অক্ষমতা নিয়ে ডাক্তার হওয়া সম্ভব নয়।”

গণেশ হাল ছেড়ে বিএসসি পড়তে শুরু করলেও তাঁর স্কুলের ডিরেক্টর চিকিৎসক দলপৎ কাটারিয়া লড়াই চালিয়ে যান সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।

অবশেষে বিচার পেলেন গণেশ। সুপ্রিম কোর্ট জানাল—তিনি মেডিক্যাল পড়তে পারবেন। সেই দিনই যেন ডাক্তার হওয়ার পথে প্রথম আলো দেখলেন তিনি।

এমবিবিএস-এর কঠিন পথ—রাইটারের সাহায্য, প্রথম সেমেস্টারের ধাক্কা

প্রথম সেমেস্টারের লিখিত পরীক্ষায় সময়মতো উত্তর শেষ করতে না পেরে ফেল করেন গণেশ। মন ভেঙে যায়।

তখনই সিনিয়র ও চিকিৎসকদের সাহায্যে তাঁকে দেওয়া হয়—

• রাইটার,
• অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময়।

তার পর আর পিছনে ফিরতে হয়নি। প্রতিটি সেমেস্টারেই প্রথম সুযোগেই পাশ করেন গণেশ।

এমবিবিএস কোর্সে এভাবে রাইটার পাওয়ার ঘটনা বিরল—গণেশই প্রথম উদাহরণ।

আজ তিনি ডাক্তার—ভাবনগরের গর্ব

২০২৫ সালের ২৬ নভেম্বর তিনি যোগ দিয়েছেন ‘বন্ডেড মেডিক্যাল অফিসার ক্লাস-২’ হিসেবে। হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে যখন রোগী আসে, তিনি দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে ইন্টার্নদের নির্দেশ দেন।

রোগীর পরিবার প্রথমে তাঁর উচ্চতা দেখে বিস্মিত হয়, কিন্তু কাজ দেখে সসম্মানে মাথা নোয়ায়।

গণেশ বলেন—
“বাস্তবায়নের পথে আমি অসংখ্য কাঁধ পেয়েছি। তাঁদের ছাড়া আজ আমি অসম্ভব।”

বন্ধু, শিক্ষক, সিনিয়র—সবার সাহায্যে গড়া সাফল্য

সহপাঠীরা কখনও তাঁকে আলাদা চোখে দেখেননি।

• লেকচারে সামনের জায়গা ছেড়ে রাখা,
• প্র্যাকটিক্যালে বিশেষ টেবিলের ব্যবস্থা,
• ইংরেজিতে সাহায্য—

সবই তাঁকে এগিয়ে দিয়েছে।

আজও গণেশ ভোলেন না তাঁর মেন্টর কাটারিয়া স্যর এবং যশ দাভেকে।

উপসংহার: মানুষ ছোট নয়, স্বপ্ন ছোট হলে তবেই দোষ

শুধু ৩ ফুট উচ্চতার জন্য যাঁকে সার্কাসে বিক্রি করতে চেয়েছিল কেউ, সেই গণেশ আজ ডাক্তার হয়ে মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন।

🌊 বিশাখাপত্তনমে ‘অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই’! কোহলি-রোহিতেই ভরসা ভারতের, মাথাব্যথা যশস্বী-গোলন্দাজদের নিয়ে