🌞 রহস্যে মোড়া মায়াদের সূর্যগণিত: বিজ্ঞানের সামনে উদ্ঘাটিত প্রাচীন পূর্বাভাসের কৌশল

রহস্যে মোড়া মায়াদের সূর্যগণিত!

খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকে প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল মধ্য ও উত্তর আমেরিকার প্রাচীন মায়া সভ্যতা। সেই সভ্যতার লোকেরা এমন এক আশ্চর্য দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, যা আজও বিজ্ঞানীদের থমকে দেয়—
তাঁরা প্রায় নিখুঁতভাবে সূর্যগ্রহণের দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করতে পারতেন।

কোন দিন সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ এসে দাঁড়াবে, কোন বছরে গ্রহণ দৃশ্যমান হবে— মায়া জ্যোতির্বিদেরা এই সব হিসেব করতেন এমন নির্ভুলতায়, যা আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই এক কথায় বিস্ময়কর।

ড্রেসডেন কোডেক্স: হারানো ইতিহাসের বেঁচে থাকা দলিল

ইউরোপীয় আক্রমণের ফলে মায়াদের বহু জ্ঞান-সম্পদ ধ্বংস হয়।
কিন্তু ‘ড্রেসডেন কোডেক্স’ নামে ৭৮ পাতার একটি প্রাচীন পুঁথি আজও রক্ষা পেয়েছে।
এখানে পাওয়া যায়—

• জ্যোতির্বিজ্ঞান
• ঋতু ও ঋতুচক্র
• চিকিৎসা ও আচার
• এবং সবচেয়ে অবাক করা গ্রহণের পূর্বাভাসের ছক

এখানেই দেখা গেছে—
মায়া জ্যোতিষীরা একটিও ভুল না করে সূর্যগ্রহণের সময় ঘোষণা করতেন।

আধুনিক বিজ্ঞানীরা কী খুঁজে পেলেন?

আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবানি-র ভাষাবিদ জন জাস্টসন এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের প্রত্নতত্ত্ববিদ জাস্টিন লোরি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ করেছেন মায়াদের গ্রহণ-হিসাবের বাস্তব পদ্ধতি।

মায়ারা গ্রহণ গণনার জন্য চন্দ্রমাস ব্যবহার করতেন।
১ চন্দ্রমাস ≈ ২৯.৫ দিন

তাঁদের ক্যালেন্ডারে ছিল ১ থেকে ৪০৫ চন্দ্রমাস পর্যন্ত হিসাব।

আগে ধারণা ছিল— হিসাব ৪০৫ মাস পর্যন্ত চলার পর আবার নতুন করে শুরু হত।
কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে:

✅ মায়ারা ৪০৫ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন না
✅ তাঁরা ৩৫৮তম মাসেই নতুন চন্দ্র-গণনা শুরু করতেন
✅ ফলে গ্রহণের প্রকৃত সময়ের সঙ্গে বিচ্যুতি থাকত মাত্র ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট

অর্থাৎ, প্রায় নিখুঁত পূর্বাভাস।

সময়ের বিচ্যুতি বাড়তে থাকলে
মায়ারা ২২৩তম মাসেই আবার গণনা পুনরায় শুরু করতেন,
যাতে ত্রুটি ধীরে ধীরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।

ফলাফল?

৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমেরিকা থেকে দৃশ্যমান প্রতিটি সূর্যগ্রহণ, মায়ারা সঠিকভাবে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
১৩৪ বছরে মোট সময়-বিচ্যুতি দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৫১ মিনিট।

গ্রহণ মানেই উৎসব নয়

গ্রহণের সময় মায়া সমাজে চলত ভিন্ন ধরনের আচার:

• সূর্যকে দুর্বল ভাবা হত
• তাই সূর্যদেবতাকে শক্তি ফেরাতে রক্ত উৎসর্গ করা হত
• পুরোহিত এবং শাসকরাই নির্ধারণ করতেন আচার-অনুষ্ঠানের রূপ
• এই অনুষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্য ছিল মহাজাগতিক শক্তিকে ভারসাম্যে রাখা

শেষ কথা

আজকের প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ যুগেও মায়া সভ্যতার এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কৌশল
বিস্ময় ও অনুপ্রেরণার উৎস।
অনেকে বলেন—
মায়ারা শুধু গণনার জাদু জানতেন না,
মহাজাগতিক শক্তির সঙ্গে একটি আধ্যাত্মিক যোগও অনুভব করতেন।