Sunday, November 30, 2025

✦ বীর পাইলটের বিদায়ে শোকস্তব্ধ দেশ—তেজস বিপর্যয়ে স্তব্ধ হিমাচল, অসহায় ৬ বছরের কন্যা ও বায়ুসেনা অফিসার স্ত্রী ✦

Share

বীর পাইলটের বিদায়ে শোকস্তব্ধ দেশ!

দুবাই এয়ার শো চলাকালীন ভারতীয় বায়ুসেনার অত্যাধুনিক লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট ‘তেজস’-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে উইং কমান্ডার নমনশ স্যায়ালের। হিমাচল প্রদেশের কাংরা জেলার এই বীর পাইলট শুক্রবার একটি বিশেষ আকাশকৌশল প্রদর্শনের সময় বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হারান। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শূন্যে ভারসাম্য হারিয়ে তেজস প্রচণ্ড বেগে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। ভারতীয় বায়ুসেনা ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং পরিবারের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ জানায়।

৩৭ বছর বয়সী নমনশ ছিলেন শৌর্য, কর্তব্যপরায়ণতা এবং নিখুঁত দক্ষতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। হিমাচলের সুজনপুর মিলিটারি স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন। গত দেড় দশক ধরে দেশরক্ষার নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। শুধু বীর পাইলট নয়, নমনশ ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ স্বামী ও পিতা। তাঁর স্ত্রীও ভারতীয় বায়ুসেনার একজন অফিসার এবং বর্তমানে প্রশিক্ষণের কাজে কলকাতায় অবস্থান করছেন। বাড়িতে রয়ে গেছে তাঁদের মাত্র ছয় বছর বয়সী কন্যা, সাথে বয়স্ক বাবা-মা—যাদের উপর নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

তেজস যুদ্ধবিমানের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা রয়েছে। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই লাইট কমব্যাট জেট ২৪ বছরের পরিষেবায় মাত্র দু’বার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তাই দুবাই এয়ার শো-র এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। প্রাথমিক অনুমান, তৎক্ষণাত গতি বা উচ্চতার ঘাটতি কিংবা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বিমানটি কৌশল সম্পূর্ণ করতে পারেনি। তবে চূড়ান্ত কারণ জানতে ভারতীয় বায়ুসেনা ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

দুর্ঘটনার খবর সামনে আসতেই হিমাচল প্রদেশ শোকের ছায়ায় ডুবে যায়। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু সমাজমাধ্যমে লিখেছেন—“দেশ এক জন বীর, সাহসী ও কর্তব্যপরায়ণ পাইলটকে হারাল। নমনশের পরিবারকে এই কঠিন সময়ে আমরা পাশে রাখছি।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরও ঘটনাকে ‘অত্যন্ত হৃদয়বিদারক’ বলে মন্তব্য করেন। কাংরা, সুলুর এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নমনশের সহকর্মী, স্কুলবন্ধু ও আত্মীয়রা শোকপ্রকাশ করছেন।

নমনশের পরিবারে তাঁর বাবা জগন্নাথ সায়্যাল ছিলেন ভারতীয় সেনার মেডিক্যাল কর্পসের কর্মী। পরে শিক্ষা দপ্তরে দীর্ঘদিন কাজ করে, অবসরের আগে প্রিন্সিপাল হন তিনি। বর্তমানে বাবা-মা তামিলনাড়ুর সুলুর বায়ুসেনা স্টেশনে থাকেন—সেখানে পৌঁছয় তাঁদের ছেলের মৃত্যুর মর্মান্তিক সংবাদ। একদিকে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সন্তান, অন্যদিকে তার পিছনে ফেলে যাওয়া ছোট শিশু—এই দুইয়ের মাঝেই বিধ্বস্ত পরিবার।

ঘটনাটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার ছবি, এবং দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতিফলন। নমনশ স্যায়ালের শূন্যস্থান পূরণ করা না গেলেও তাঁর সাহস, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম বায়ুসেনার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

Read more

Local News