পথদুর্ঘটনায় আহতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য বিমা সংস্থা!
পথদুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি কিংবা তাঁর পরিবার বিমার চুক্তির কোনও শর্ত ভঙ্গ করলেও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার হারাবেন না—এমনই গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। তেলঙ্গানা হাই কোর্টের আগের রায় উলটে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিল, বিমা সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবেই। তবে পরে গাড়ির মালিকের কাছ থেকে সেই অর্থ আদায় করতে পারবে সংস্থাটি।
এই রায় ভুক্তভোগীদের অধিকারের পক্ষে যেমন বড় জয়, তেমনই বিমা সংস্থার দায়িত্ববোধের বিষয়টিও আরও এক বার সামনে এনে দিল।
❖ কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট?
বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়—
- বিমার শর্ত ভঙ্গ হলেও আহত বা নিহতের পরিবার ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য।
- সংস্থাকে আগে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
- পরে বিমা কোম্পানি recovery suit দায়ের করে গাড়ির মালিকের কাছ থেকে সেই অর্থ তুলে নিতে পারবে।
অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে প্রথমে দায় এড়িয়ে যাওয়ার উপায় থাকছে না বিমা সংস্থার হাতে।
শীর্ষ আদালত পুরনো কয়েকটি সিদ্ধান্তও উল্লেখ করে জানায়—বিমা সংস্থার “প্রাথমিক দায়বদ্ধতা” থেকেই এই নীতি তৈরি হয়েছে।
❖ কোন মামলায় এই রায়?
তেলঙ্গানার আকুল নারায়ণ নামে এক ব্যক্তি একটি পাঁচ আসনের গাড়িতে যাত্রী হয়ে যাচ্ছিলেন। সেই গাড়িতেই মোট ন’জন যাত্রী ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রিবোঝাই গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন আকুল।
ট্রাইব্যুনালের রায়
মোটর অ্যাক্সিডেন্টস ক্লেম্স ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয়—
- ওরিয়েন্টাল ইনসিওরেন্স কোম্পানি
- এবং গাড়ির মালিক
উভয়েই ক্ষতিপূরণ দেবেন।
হাই কোর্টের রায়
তেলঙ্গানা হাই কোর্ট পরে সেই নির্দেশ বাতিল করে। তাদের যুক্তি—
- ৫ আসনের গাড়িতে ৯ জন যাত্রী
- বিমা চুক্তির শর্ত স্পষ্ট লঙ্ঘন
- তাই সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা যায় না।
এই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন আহত আকুল।
❖ বিমা সংস্থার দাবি কেন খারিজ হল?
বিমা সংস্থার পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়—
- চুক্তিতে বলা ছিল চালক ও কন্ডাক্টর ছাড়া অন্য কেউ ক্ষতিপূরণের অধিকারী নন।
- আরও বলা হয়, অস্বাভাবিক সংখ্যক যাত্রিবহন চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানান—
- চুক্তিভঙ্গের দায় যাত্রীর নয়; দায় গাড়ির মালিকের।
- বিমা সংস্থার মূল ভূমিকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
- পরে সংস্থাই মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা পুনরুদ্ধার করতে পারে।
ফলে সাধারণ যাত্রী কিংবা আহত পরিবারকে কোনও পরিস্থিতিতেই ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
❖ রায়ের তাৎপর্য
এই রায় অসংখ্য দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারের জন্য বড় আশ্বাস। কারণ—
- বিমার শর্ত না জানার ভুলে ক্ষতিপূরণ হারানোর ভয় থাকবে না।
- অতিরিক্ত যাত্রী, লাইসেন্সের ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি—এই সব ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ পাবেন আহতেরা।
- সংস্থার দায় এড়ানোর পথ সংকুচিত হল।
- গাড়ির মালিকের দায়িত্ববোধও বেড়ে গেল।
❖ উপসংহার
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় পথদুর্ঘটনার মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির। আহত ব্যক্তি বা মৃতের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পৌঁছানোই হবে মূল লক্ষ্য—এ কথা আবারও স্পষ্ট করল সর্বোচ্চ আদালত।
বিমার চুক্তির জটিলতা বা মালিকের অবহেলা ভুক্তভোগীর ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিতে পারে না—এই নীতিকেই আরও জোরদার করল এই রায়।

