ট্যাংরাকাণ্ডে দে ভাইদের বিরুদ্ধে খুনের চার্জশিট জমা!
ট্যাংরার আতঙ্ক আবারও শিরোনামে। পরিবারের তিন সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে আলোচিত সেই “ট্যাংরাকাণ্ড”-এ অবশেষে ৯৯ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দিল কলকাতা পুলিশ। শিয়ালদহ আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে খুনের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে দে পরিবারে দুই ভাই—প্রণয় দে ও প্রসূন দে-র বিরুদ্ধে।
২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছিল ট্যাংরার অতল শূর রোডের এক বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি দেহ। নিহতরা—দু’জন গৃহবধূ রোমি দে ও সুদেষ্ণা দে এবং এক কিশোরী প্রিয়ম্বদা। প্রথমে ঘটনাটি আত্মহত্যা না দুর্ঘটনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসে ভয়াবহ সত্য—তিন জনকেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।
পুলিশের চার্জশিট অনুযায়ী, কিশোরী প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়, অর্থাৎ খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে দুই বধূর মৃত্যু হয়েছে হাতের শিরা কেটে দেওয়া হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। এই নির্মম ঘটনাটিকে ‘পরিবারের ভিতরেই সংগঠিত হিংসা ও ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থা।
চোখ ধাঁধানো মোড় আসে ঘটনাপ্রবাহে, যখন একই পরিবারের বাকি তিন সদস্য—প্রসূন, প্রণয় এবং একমাত্র জীবিত কিশোর প্রতীপ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হন। বাইপাসের ধারে একটি মেট্রোর পিলারে ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়ি। সেই সময়ই পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে ট্যাংরার ঘটনার সংযোগ খুঁজে পায়।
চার্জশিটে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার যেসব ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে—
- ধারা ১০৩ (১): খুনের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের সাজা প্রযোজ্য।
- ধারা ১০৯ (১): হত্যাচেষ্টা বা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৃত্যুর কারণ ঘটালে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ড।
- ধারা ৩ ও ৫: অপরাধমূলক সহযোগিতা এবং পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ সংক্রান্ত ধারা।
এই মামলায় মূল অভিযুক্ত প্রসূন দে নিজের দোষ স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছে, “আমি বাঁচতে চাই না।” তাঁর এই স্বীকারোক্তি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দেয়। প্রসূনের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ থাকলেও, বড় ভাই প্রণয়ের বিরুদ্ধে মূলত হত্যায় সহযোগিতা এবং পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ। প্রণয় শারীরিক অসুস্থতার কারণে এতদিন হাসপাতালে ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
ট্যাংরার সেই বাড়িতে বেঁচে ফেরা একমাত্র কিশোর প্রতীপ বর্তমানে সরকারি হোমে রয়েছে। তাঁকে নিয়েও আলাদা নজরদারি চালাচ্ছে প্রশাসন, কারণ সে-ই হতে পারে ভবিষ্যতে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
এই তিন খুনের ঘটনা শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যের মানুষের মনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। একেই বলা যায় পরিবারভিত্তিক ট্র্যাজেডির অন্ধকারতম অধ্যায়। পুলিশের দ্রুত চার্জশিট পেশ করায় আইনি প্রক্রিয়া এবার গতি পেতে চলেছে।
আম খাওয়ার সেরা সময় এবং কীভাবে খেলে ওজন বা শর্করা বাড়বে না!

