৭৬৫০ কিলোমিটার দূরের ভালবাসা!
রাঁচীর পর রায়পুর— দুই শহরেই ব্যাট হাতে ফের চেনা আগ্রাসী রূপে দেখা গেল বিরাট কোহলিকে। ধারাবাহিক দ্বিতীয় ম্যাচে শতরান করলেন ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয়। স্বভাবতই তখনই দেখা গেল তাঁর পরিচিত সেলিব্রেশন— গলার চেনে ঝোলা আংটিতে চুম্বন। স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে উৎসর্গ করা এই ভঙ্গি বছরের পর বছর প্রতিটি শতরানের পরই নিয়ম হয়ে উঠেছে। তবে এ বার বিশেষত্ব ছিল অন্যত্র। রায়পুরের মাঠে দাঁড়িয়ে নয়, লন্ডনে বসে ৭৬৫০ কিলোমিটার দূর থেকে স্বামীর শতরান প্রত্যক্ষ করলেন অনুষ্কা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলেন তাঁর ভালবাসা।
ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় খেলছেন কোহলি, অন্য দিকে কাজের ব্যস্ততায় লন্ডনেই অবস্থান করছেন অনুষ্কা। সময়ের পার্থক্য সত্ত্বেও ম্যাচটি সরাসরি দেখেছেন তিনি। টেলিভিশনের পর্দায় কোহলির শতরান উদ্যাপনের মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করে নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে শেয়ার করেন নায়িকা। ফ্রেমে কোহলির উচ্ছ্বাস, আর পাশে অনুষ্কার দেওয়া লাল হৃদয়ের ইমোজি— দু’জনের দীর্ঘ দিনের প্রেমকাহিনির মতোই নিখুঁত এক ছবি।
বিয়ের অনেক আগে থেকেই বিরাট-অনুষ্কার সম্পর্ক শিরোনামে ছিল। মাঠে কোহলির প্রায় প্রতিটি বড় ইনিংসেই দর্শকাসনে দেখা যেত অনুষ্কাকে। শতরান করলে দু’জনে একে অপরের দিকে উড়ে আসত চুম্বন। সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনও কখনও অনুষ্কাকে কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে, বিশেষ করে কোহলি ব্যর্থ হলে। সেই আক্রমণের জবাব দিয়েছেন কোহলি নিজেই— বারবার বলেছেন, জীবনে স্থিরতা ও মানসিক শক্তি এনে দিয়েছেন অনুষ্কা, তিনি তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থক।
বিয়ের পরে প্রথম দিকে মাঠে অনুষ্কার উপস্থিতি আগের মতোই নিয়মিত ছিল। কিন্তু সন্তান আগমন, কাজের চাপ এবং বর্তমানে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস— সব মিলিয়ে কিছুটা কমেছে সেই উপস্থিতি। তবু দূরত্ব বাধা নয়— রায়পুরের ইনিংসের পর তা ফের প্রমাণ করলেন এই তারকা দম্পতি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বর্তমানে কোহলির ক্রিকেট ক্যালেন্ডারও বদলে গিয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ। কিন্তু বয়স এবং তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে তাঁর জায়গা কতটা নিশ্চিত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে প্রশ্নের জবাবই যেন দিচ্ছেন ব্যাট হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পরপর দুই শতরানে তিনি আবার প্রমাণ করলেন— বড় মঞ্চে তাঁর থেকে নির্ভরযোগ্য কেউ নেই।
অন্য দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ়ের আগে তিনি লন্ডনেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই দলের সঙ্গে যোগ দেন। অনুষ্কা ও সন্তানদের সঙ্গে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা এখন লন্ডন, এবং ক্রিকেট–জীবনের পরবর্তী অধ্যায়েও তিনি হয়তো সেখানেই থাকবেন— এমনটাই কাছের মহলের ধারণা। তবে যত দূরেই থাকুন, কোহলির প্রতিটি বিশেষ মুহূর্তে অনুষ্কার উপস্থিতি যেন অব্যাহত।
রায়পুরে শতরানের পর বিরাটের চোখ তুলে তাকানো, আকাশের দিকে ইঙ্গিত, আর গলার চেনের আংটিতে চুম্বন— সেই দৃশ্য এ বার মাঠে নয়, লন্ডনের ঘরোয়া পরিবেশে বসে উপভোগ করলেন অনুষ্কা। আর তাঁর স্টোরি দেখে ক্রিকেটপ্রেমীরা লিখলেন— “দূরত্ব নয়, ভালবাসাই সম্বল।”
এই প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত সেলিব্রিটি দম্পতির ক্রিকেট–রোম্যান্স তাই আবারও মাতাল করল সামাজিক মাধ্যমকে।

