Monday, March 31, 2025

‘৬,০০০ টাকার’ বিদ্রুপ: রাশিয়ান স্ত্রী নিয়ে বিতর্কের মুখে ভারতীয় ইউটিউবার মিথিলেশ

Share

রাশিয়ান স্ত্রী নিয়ে বিতর্কের মুখে ভারতীয় ইউটিউবার মিথিলেশ

রাজস্থানের উদয়পুর, যা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিত, সেখানেই এক অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলেন ভারতীয় ইউটিউবার মিথিলেশ লালচাঁদ যাদব। রাশিয়ান স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে তিনি বিদ্রুপ এবং আপত্তিকর মন্তব্যের সম্মুখীন হন। ঘটনাটি শুধু একটি ব্যক্তিগত অপমানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। তবে মিথিলেশ যে ভাবে এই অপমানের জবাব দিয়েছেন, তা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে।

কে এই মিথিলেশ লালচাঁদ যাদব?

মহারাষ্ট্রের ছেলে মিথিলেশের যাত্রা এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু হয়। মুম্বাইয়ের তোলানি কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ২০১৪ সালে জার্মান সংস্থা ডিএইচএলে চাকরি করতেন। সেখান থেকে মাসে ১৩,৮০০ টাকা রোজগার করতেন। কিন্তু চাকরির বদ্ধ জীবনে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৬ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘মিথিলেশ ব্যাকপ্যাকার’ শুরু করেন।

২০১৭ সালে তাঁর কাছে ছিল মাত্র ৪,৫০০ টাকা। সেই সামান্য অর্থ নিয়ে তিনি মালয়েশিয়া ঘুরে একটি ভিডিও বানান। ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং ইউটিউব দুনিয়ায় তিনি আলোচনায় আসেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, হংকং— এমন বহু দেশ ভ্রমণ করে তিনি তাঁর চ্যানেলে দৃষ্টিনন্দন ও তথ্যমূলক ভিডিও তৈরি করেন। আজ তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে ১০ লক্ষেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার। এমনকি, তিনি ইউটিউবের গোল্ডেন বাটনও পেয়েছেন।

ইউটিউবার

রাশিয়ান স্ত্রীকে নিয়ে অপমান

২০২২ সালের ৭ এপ্রিল, রাশিয়ার লিজার সঙ্গে বিয়ে করেন মিথিলেশ। তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে, যার নাম আয়ান। সম্প্রতি উদয়পুরে ভ্রমণের সময় স্ত্রী লিজার সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন মিথিলেশ। সেই সময় এক যুবক তাঁর স্ত্রীকে দেখে বিদ্রূপাত্মক ও অবমাননাকর মন্তব্য করে। কথাগুলির মধ্যে একটি ছিল, “৬,০০০ টাকার রাশিয়ান বউ এনেছেন!” এমন মন্তব্য মিথিলেশের কানে পৌঁছামাত্রই তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেন।

মিথিলেশ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এমন নোংরা মানসিকতা এবং অশালীন মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার কথা শেয়ার করেন, যা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, “আমাদের সমাজের একটা অংশ এখনও নারী ও বিদেশিদের নিয়ে কটূক্তি করতে পেছপা হয় না। এটাই আসল সমস্যা। মানুষকে শিক্ষিত হতে হবে এবং সম্মান করতে শিখতে হবে।”

সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়ার পর, বহু মানুষ মিথিলেশের পাশে দাঁড়ান। তাঁর অনুরাগীরা বলেন, এই ধরনের মন্তব্য শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা সমাজের জন্য লজ্জার। কেউ কেউ এই বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন, ভারতের আতিথেয়তার ঐতিহ্যকে এ ধরনের আচরণ কলঙ্কিত করে।

একইসঙ্গে, মিথিলেশের প্রতিক্রিয়া আরও বেশি প্রশংসিত হয়েছে। তিনি অত্যন্ত শান্ত ও পরিণতভাবে বিষয়টি সামলেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “একজন পর্যটন ব্লগার হিসেবে আমি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও ভারতের ভালো দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু মানুষ আমাদের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের বিপরীত কাজ করেন, যা খুবই হতাশাজনক।”

মিথিলেশের জীবন দর্শন

মিথিলেশের জীবনযাত্রা এবং সফলতা অনেকের জন্য প্রেরণার। মাত্র ৪,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে তিনি আজ ভারতের অন্যতম সফল ভ্রমণব্লগার। তবে তাঁর সাফল্যের মূলে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং সৎ মানসিকতা। এই ঘটনাও তিনি খুব পরিণতভাবে সামলেছেন। তাঁর মতে, “কটূক্তি আর বিদ্রূপ আমাকে থামাতে পারবে না। এগুলো আমার কাজের প্রতি উৎসাহ আরও বাড়ায়।”

অপমান থেকে অনুপ্রেরণা

মিথিলেশের এই ঘটনা আমাদের সমাজের এক গভীর সমস্যার দিকে আঙুল তোলে। বিদেশি নারী, বিশেষ করে যারা ভিন্ন সংস্কৃতির অংশ, তাঁদের সম্মান করার মানসিকতা আমাদের দেশে এখনও যথেষ্ট বিকশিত হয়নি। তবে মিথিলেশের মতো মানুষেরা এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, অপমানকে কীভাবে নিজের শক্তিতে রূপান্তর করা যায়।

উপসংহার

মিথিলেশ লালচাঁদ যাদব শুধু একজন সফল ইউটিউবারই নন, বরং একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। তিনি যেমন দেশবিদেশে ভারতের ভালো দিক তুলে ধরেন, তেমনি দেশের অভ্যন্তরের সমস্যাগুলোকেও সামনে আনেন। তাঁর উদাহরণ থেকে আমরা শিখতে পারি, সঠিক কাজের জন্য নিজের জায়গায় অটল থাকা সব সময়ই শ্রেয়। তাঁর প্রতিবাদ এবং পরিণত প্রতিক্রিয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সম্মান অর্জন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা বজায় রাখা আরও বেশি জরুরি।

জন্ম রাশিয়ায়, উচ্চতা সাত ফুট, ভক্তদের কাছে তিনি পরশুরাম! মহাকুম্ভে আলোচনায় ‘মাসকুলার বাবা’

Read more

Local News