৪৩-এও ধোনি দুরন্ত!
৪৩ বছর বয়সে এসেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির গতি আর দক্ষতা অবাক করে চলেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। রবিবারের ম্যাচে মুম্বইয়ের তারকা ব্যাটার সূর্যকুমার যাদবকে মাত্র ০.১২ সেকেন্ডে স্টাম্পড করে ক্রিকেট দুনিয়ায় আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ধোনি। তবে এই দুর্ধর্ষ স্টাম্পিংয়ের পরও বিষয়টিকে একেবারেই হালকা করে দেখতে চাইলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
মুহূর্তের ম্যাজিক, নাকি অভ্যাসের জয়?
ধোনির স্টাম্পিং মুহূর্তটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। বল সূর্যকুমারের ব্যাট মিস করার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুতের গতিতে বেল ফেলে দেন ধোনি। মাত্র ০.১২ সেকেন্ড সময় নিয়ে এই অসাধারণ স্টাম্পিং সম্পন্ন করেন তিনি। কিন্তু ম্যাচ শেষে ধোনি নিজেই জানালেন, বিষয়টা ততটাও পরিকল্পিত ছিল না। তাঁর ভাষায়, “ওটা হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছে।”
ধোনি আরও বলেন, “আমি খুব সাধারণ উইকেটকিপার। উইকেটের পিছনে বেশি ঝাঁপাঝাঁপি আমার ধাত নয়। আমি সব সময় চেষ্টা করি সহজভাবে কাজটা করতে। দু’হাতে ক্যাচ নেওয়া বা স্টাম্পিং করাই আমার পছন্দ। এটা আমার অভ্যাস।”
উইকেটরক্ষণে ধোনির দর্শন
ধোনির মতে, উইকেটকিপিং শুধু হাতের দক্ষতার ব্যাপার নয়, বরং মাথা ঠান্ডা রেখে মুহূর্তের সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, “কিপার হিসেবে আমি শান্ত থাকতেই ভালোবাসি। বেশি নড়াচড়া বা শো অফ করা আমার স্টাইল নয়। পিচ কেমন আচরণ করছে, ব্যাটারের মনোভাব কেমন, সবকিছু পর্যবেক্ষণ করাই আমার কাজ।”
কিপার না হলে ধোনির অস্বস্তি
ধোনি আরও জানান, উইকেটকিপিং না করলে নিজেকে দলের অংশ বলে মনে হয় না। উইকেটের পিছনে থাকলেই তিনি পুরো খেলা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং অধিনায়ককে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারেন। তাঁর কথায়, “উইকেটরক্ষণ কঠিন, কিন্তু এই কঠিন কাজটাই আমি উপভোগ করি। পিচের চরিত্র বোঝা, ফিল্ডিং সাজানো এবং বোলারদের গাইড করা – সবকিছুই উইকেটের পিছন থেকে ভালোভাবে করা যায়।”
সূর্যকুমারের স্টাম্পিং: কৌশল নাকি মুহূর্তের সিদ্ধান্ত?
ধোনির মতে, পিচের চরিত্র প্রথম ছয় ওভারে একরকম থাকে, এরপর ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়। কিপার হিসেবে তিনি সেসব ছোটখাটো পরিবর্তন দ্রুত বুঝতে পারেন এবং সে অনুযায়ী বোলারকে নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, “যখন ব্যাটার বড় শট খেলার চেষ্টা করে, আমি বুঝতে পারি বলটা আদৌ ভালো ছিল কি না। এই বিশ্লেষণগুলো মাঠে বড় ভূমিকা রাখে। অধিনায়ককে আমি এসব জানিয়ে দিই, আর সেটা অনেক সময় দলের পক্ষে কার্যকর হয়।”
ধোনির বিনয়
ধোনির এমন দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরও তাঁর নম্রতা মুগ্ধ করেছে সবাইকে। স্টাম্পিং নিয়ে গর্ব করার বদলে ধোনি এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেই উল্লেখ করলেন। তাঁর শান্ত মনোভাবই তাঁকে এখনও অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক হিসেবে ধরে রেখেছে।
ক্রিকেটবিশ্বে ধোনির এই স্টাম্পিং বহুদিন মনে রাখা হবে। তবে ধোনির মতে, এটি ছিল কেবল আরেকটা দিন, আরেকটা মুহূর্ত। আর সেই মুহূর্তগুলোই ধোনিকে লিজেন্ড বানিয়ে তুলেছে।