৩৩ সেকেন্ড কিস কাটা গেল
কলেজ পড়া শেষ করে অভিনয়ের স্বপ্ন পুষতে দিল্লির একটি ট্যালেন্ট এজেন্সিতে যোগ দিয়েছিলেন শ্রেয়া ধন্বন্তরি। কিন্তু বলিউডের পথটা সহজ ছিল না—সফলতার আগে দীর্ঘ সংগ্রাম, অনিশ্চয়তা আর একাধিক ত্যাগ বুকে নিয়ে তিনি মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন ভূমি পেডনেকরের পরামর্শে। সেই থেকে ধীরে ধীরে নাম করেছেন পারদে-ওটে; ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’, ‘স্ক্যাম ১৯৯২’, ‘মুম্বাই ডায়েরিজ ২৬/১১’—এসব সিরিজে চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স করেছেন শ্রেয়া। বড় পর্দায় ২০১৯-এর ‘হোয়াই চিট ইন্ডিয়া’ দিয়ে তাঁর বলিউড ইনিংস শুরু।
কিন্তু সেই সফলতার ছায়ার পিছনে আছে কষ্টের অনেক গল্প। বলিপাড়ার অনেকে জানেন না—একবার অডিশনে যেতে গাড়ি ভাড়ার জন্য টাকা না থাকায় শ্রেয়া তিন দিন বাজারে একফোঁটা খাবারও খেতে পারেননি। মুম্বইয়ের সেই অকল্পনীয় সংগ্রামের কথা তিনি মাঝে মাঝে স্মরনে আনেন—কীভাবে মডেলিং করে জমানো অল্প অল্প টাকায় সংসার চালিয়েছেন, কেমন ত্যাগ করে সভাগৃহে পৌঁছেছেন। সেই অভিজ্ঞতা হয়তো তাকে ধৈর্যশীল এবং লড়াকু করে তুলেছে।
শ্রেয়ার অভিনয় যাত্রা অনেকটাই জোরালো। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর তিন নম্বর সিজনে তাঁর চরিত্র এবং সহ-অভিনেতা হরমন সিংয়ের সঙ্গে কেমিস্ট্রি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। অনলাইনেও বড় ফলোয়িং তৈরি করেছেন; ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফেলোয়ারের সংখ্যা লাখের উপর। কাজের কথা উঠলেই শ্রেয়া পেশাদার—নতুন চরিত্র, জটিল মনস্তত্ত্ব শোনাচ্ছেন তিনি দক্ষতার সঙ্গে।
তবে অভিনয়ের বাইরে সম্প্রতি তিনি সামাজিক মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে সরব হয়েছেন—কিছুদিন আগে হলিউডের একটি বিখ্যাত ছবির ৩৩ সেকেন্ডের চুমুর দৃশ্য কেটে দেওয়ার ঘটনায় শ্রেয়া খোদ সিবিএফসি-কে কটাক্ষ করেছেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি বলেছিলেন, “মানুষ যেখানে টাকা খরচ করে সিনেমা দেখতে যায়, তাঁদের দেখার অধিকার কেন আগাছা হিসেবে কাটা হচ্ছে?”—এই সংকোচন-প্রক্রিয়াকে তিনি উচ্ছৃঙ্খল এবং দর্শকবিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর এই ক্ষোভ অনেকে সমর্থন করেছে; কেউ বলছে, শিল্পী-স্বাধীনতার প্রশ্নে এটা বড় ইস্যু।
বলিপাড়ায় গুঞ্জনও কম নেই—কাজের সূত্রে শ্রেয়ার নানা সহশিল্পীর সঙ্গে ঘন সুসম্পর্ক দেখেন অনেকে। সম্প্রতি হরমন সিংয়ের সঙ্গে প্রকাশ্য মমতামাখা মন্তব্যও জল্পনা বাড়িয়েছে; কিন্তু পরিচালক-তারকারা বলছেন, প্রায়শই পেশাদারিত্বের জাল বেঁধে বন্ধুত্বের ফ্ল্যাটলাইন তৈরি হয়—সবকিছুই প্রফেশনাল।
শ্রেয়ার কেরিয়ারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল—ওটিটির তাজা সিরিজটি তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কিন্তু যেটা তাকে আলাদা করে তোলে, সেটি তাঁর অকৃত্রিম ভাষ্য এবং সংগ্রাম—ঐক্যবদ্ধভাবে বললে বলা যায়, গাড়ি ভাড়া না পেয়ে অনাহারে থাকা দিনগুলোই হয়তো শ্রেয়াকে আজ নিজের মতো করে কথা বলার সাহস দিয়েছে। ৩৩ সেকেন্ড কাটা গেল—কিন্তু সেই ক্ষোভ ও প্রশ্নই শ্রেয়াকে করে তুলেছে সময়ের সঙ্গে আরও তীক্ষ्ण, আরও সচেতন।

