২৬ হাজার চাকরি বাতিল!
গত বছরের এপ্রিল থেকে এই বছরের এপ্রিল—ঠিক এক বছর। এই সময়ের মধ্যে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেও স্বস্তি পায়নি রাজ্য সরকার। শীর্ষ আদালতও সেই রায় বহাল রেখেছে। ফলে, ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) মাধ্যমে হওয়া পুরো প্যানেলই বাতিল হয়ে গেল।
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার কি আরও এক বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়তে চলেছে?
এক বছর আগের ঘটনা, এক বছর পরেও একই পরিণতি
২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগপত্র সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা বাতিল করতে হবে। এই রায়ের ফলে ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরি হারান।
রাজ্য সরকার সঙ্গে সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বলেছিলেন—
“আমরা কারও চাকরি খেতে দেব না।”
কিন্তু এক বছর পর ২০২৫ সালের এপ্রিলেই সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় বহাল রাখল। ফলে, বাতিল চাকরির সংখ্যা আগের মতোই রয়ে গেল এবং নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
তৃণমূলের অন্দরমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরেই দুটি ভিন্ন মত দেখা যাচ্ছে—
১. একটি অংশের দাবি, এই রায়ে জনমানসে সরকারের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে। কারণ, SSC-র দায়িত্বে থাকা কর্তারা যে পুরো প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল।
- অন্য অংশের দাবি, তিন মাসের মধ্যে যদি নতুনভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করা যায়, তবে এই ইস্যু ভোটের আগে তেমন প্রভাব ফেলবে না।
এক শীর্ষ তৃণমূল নেতা বলেন—
“লোকসভা নির্বাচনের সময়েও তো হাই কোর্ট SSC-র পুরো প্যানেল বাতিল করেছিল। তারপরেও আমাদের ফল আগের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ভালো হয়েছিল।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, নিয়োগ নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ এবং চাকরি বাতিলের মতো ঘটনা যদি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে বাধ্য।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও রাজ্যের চ্যালেঞ্জ
গত এক বছরে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার একাধিক শুনানি হয়েছে। আদালত প্রথম থেকেই বলেছিল, যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা হোক। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
ফলে, সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করেনি।
এখন শীর্ষ আদালত তিন মাসের মধ্যে নতুনভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে।
‘যোগ্যরা বঞ্চিত হলেন’, বলছেন তৃণমূল নেতারা
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন—
“যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছে, তারা উচ্ছন্নে যাক! কিন্তু যারা যোগ্য, তাদের প্রতি এই রায়ে অবিচার হল।”
তবে অনেক তৃণমূল নেতাই মনে করছেন, এই রায় শুধুমাত্র ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থী ও তাদের পরিবারের জন্য নয়, এটি সার্বিকভাবে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা আরও গভীর করবে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যতের ভাবনা
তৃণমূলের আশাবাদী অংশের মতে, এই রায় ভোটের আগে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না, কারণ বিধানসভা নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি।
কিন্তু অন্য অংশের মতে, এই ধরনের ঘটনার একটার পর একটা ধারাবাহিকতা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়াতে পারে।
একজন প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলছেন—
“আরজি কর হাসপাতালের আন্দোলন দেখেছিলাম, যেখানে নাগরিকদের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ ফুটে উঠেছিল। এই অসন্তোষ এখন ভোটে সরাসরি প্রভাব না ফেললেও ভবিষ্যতে ফেলবে না, তা হলফ করে বলা যায় না।”
কী করবে সরকার?
বর্তমানে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রাজ্যের একাধিক বড় নেতার নাম জড়িয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো জেলবন্দি।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছিলেন, তারা নতুন নিয়োগের জন্য আবার আবেদন করতে পারবেন।
এতেই তৃণমূলের ভেতর প্রশ্ন উঠছে—
“এক বছর আগে যদি নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা যেত, তাহলে এত দিন ধরে আইনি লড়াই কেন চলল?”
শেষ কথা
এখন সব চোখ রাজ্য সরকারের দিকে। শিক্ষা দফতর এবং SSC কীভাবে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করে, তার উপর নির্ভর করবে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি।
একইসঙ্গে, তৃণমূল কংগ্রেস কীভাবে এই সংকটের রাজনৈতিক মোকাবিলা করবে, সেটাও আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
রাজনীতির ময়দানে এই রায় শাসকদলের জন্য নতুন ‘বিড়ম্বনা’ হয়ে দাঁড়াবে নাকি দল তা সামলে উঠতে পারবে—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন!
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!